হাঁস-মুরগির রোগ ও প্রতিরোধে করণীয়
ভূমিকাঃ
আবহমান কাল থেকেই গ্রাম বাংলার প্রতি বাডিতেই কম-বেশী হাঁস-মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। হাঁস-মুরগি লালন পালন এখন খুবই লাভজনক। খাদ্য ও আমিষের চাহিদা পূরণে হাঁস-মুরগির অবদান অনস্বীকার্য। দেশী ও উন্নত জাতের হাঁস-মুরগি পালনের সাথে সাথে যথা সময়ে সঠিক টিকা প্রয়োগ ও উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা একান্ত আবশ্যক। নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিয়ে হাঁস-মুরগির বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। হাঁস-মুরগির রোগ ও প্রতিরোধে করণীয় ফোল্ডারটি হাঁস-মুরগির বিভিন্ন রোগ দমনে সহায়ক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ক্ষেত্রে টিকা প্রদান কর্মসূচি অনুসরণ করলে হাঁস-মুরগিকে সহজেই রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
রোগ পরিচিতি:
মারেক্স (Marek's):
মারেক্স মোরগ-মুরগির ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগের কোন চিকিৎসা নেই। যথাসময়ে গুণগত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে মোরগ-মুরগিকে সুস্থ রাখা যায়।
রোগের লক্ষণ:
সাধারণত: ৬ সপ্তাহ এবং প্রকারভেদে ১২-১৪ সপ্তাহ বয়সের মুরগি এই রোগে আক্রান্ত হয়, অনেক মুরগি একত্রে আক্রান্ত হয়, চোখ ঘোলাটে হয়ে মুক্তার মত সাদা হয়, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকে, প্যারালাইসিস হয়।
হাঁস-মুরগির টিকা প্রদান কর্মসূচি:
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণির প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
মারেক্স |
মারেক্স টিকা |
বাচ্চা মুরগি ১ দিন বয়সে |
পূর্ণ জীবন |
২০০ সি.সি. ডাইল্যুয়েন্টের সাথে গুলানোর পর ০.২এম এল মাংস বা চামড়ার নীচে |
-২০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১বছর, -৫ ডিগ্রি থেকে ০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬মাস |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
মুরগির রানীক্ষেত:
মোরগ-মুরগির সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে রাণীক্ষেত অন্যতম। রোগটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক রোগ, যে কোন বয়সের মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। রাণীক্ষেত রোগে মৃত্যুর হার শতকরা কম বেশি একশত ভাগ।
রোগের লক্ষণ:
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
রানীক্ষেত |
বাচ্চা মুরগির রানীক্ষেত টিকা (বি.সি.আ.ডি.ভি) |
৫-৭ দিন বয়স ও ২১ দিন সয়স |
৬-৮ সপ্তাহ |
০৬ সি.সি. ডিষ্টিলড ওয়াটারে মিশানোর পর মাত্র ১ ফোটা এক চোখে |
-২০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১ বছর, -৫ ডিগ্রি থেকে ০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬ মাস ৪ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৪ মাস ,বরফসহ থার্মোফ্লাক্সে ১৫ দিন |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
|
পিজিয়ন পক্স:
ভাইরাস জনিত রোগ। রোগটি সব জাতের এবং সব বয়সী কবুতর ও মোরগ-মুরগিকে আক্রান্ত করে থাকে।
রোগের লক্ষণ:
সুপ্তিকাল ৪-২০ দিন, ইষৎ, হলুদ বর্ণের ওয়ার্ট প্রধান লক্ষণ, প্রধানত: মাথা ও ঝুটিতে এবং অনেক সময় মুখ গহ্বর, খাদ্যনালী, শ্বাসনালীতে পক্স লিসন দেখা যায়।
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
পিজিয়ন পক্স |
পিজিয়ন পক্স টিকা |
কবুতর ৫-৭ দিন, বাচ্চা মুরগি ২-৭ দিন বয়সে |
১-৩ সপ্তাহ |
০৩ সি.সি. ডিষ্টিলড ওয়াটারে মিশানোর পর বাই ফারকেট নিডেল দ্বারা পাখার নীচে ১ ফোটা খুচিয়ে প্রয়োগ করতে হয় |
-২০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১ বছর, -৫ ডিগ্রি থেকে ০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৫ মাস |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
গামবোরো:
গামবোরো ভাইরাস জনিত রোগ। সাধারণত ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মৃত্যুর হার শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ হতে পারে। কখনো এই মৃত্যুর হার ৯০-১০০ ভাগ হতে দেখা যায়।
রোগের লক্ষণ:
আক্রান্ত বাচ্চা আঁঠালো পায়খানা করতে থাকে, মলদ্বারে পালক ভিজা, পালক উস্কো খুস্কো, অবসন্নতা, পানি শূন্যতায় পাখি মারা যায়।
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
গামবোরো |
বি.এ.ইউ ৪০৪ |
১০-২১ দিন বয়সে ১ম ডোজ এবং ৭ দিন পর ২য় ডোজ |
পূর্ণ জীবন |
৫০ সি.সি. ডাইল্যুয়েন্টের সাথে মিশানোর পর ১ চোখে ১ ফোটা মাত্র |
০ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
ফাউল পক্স:
মোরগ-মুরগির ভাইরাস জনিত একটি রোগ। যে কোন বয়সে মোরগ-মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
ফাউল পক্স রোগের লক্ষণ:
সুপ্তিকাল ৪-২০ দিন, ইষৎ, হলুদ বর্ণের ওয়ার্ট প্রধান লক্ষণ, প্রধানত: মাথা ও ঝুটিতে এবং অনেক সময় মুখ গহ্বর, খাদ্যনালী, শ্বাসনালীতে পক্স লিসন দেখা যায়।
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
ফাউল পক্স |
ফাউল পক্স টিকা |
২০ দিন বা তদুর্ধ |
পূর্ণ জীবন |
০৩ সি.সি. ডিষ্টিলড ওয়াটারে মিশানোর পর বাই ফারকেট নিডেল দ্বারা পাখার নীচে একাধিকবার খুচিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। |
-২০ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১বছর -০৫ডিগ্রি থেকে ০ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৫ মাস |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
বড় মুরগির রানীক্ষেত:
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
|
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
|
বড় মুরগির রাণীক্ষেত |
বড় মুরগির রাণীক্ষেত টিকা (আর.ডি.ভি) |
২ মাস বা তদুর্ধ |
৬ মাস |
১০০সি.সি. ডিষ্টিলড ওয়াটারে মিশানোর পর ১ এম.এল মাংস পেশীতে |
-২০ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১বছর -০৫ডিগ্রি থেকে ০ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬ মা, ৪ডিগ্রি থেকে ৮ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৪ মাস, বরফসহ থার্মোফ্লাক্সে ১৫ দিন |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
|
ফাউল টাইফয়েড/ সালমোনেলোসিস:
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণীর প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
ফাউল টাইফয়েড/ সালমোনেলোসিস |
সালমোনেলা/ফাউল টাইফয়েড টিকা |
৬-৮ সপ্তাহ ১ম ডোজ ৪ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ ৬ মাস পর বুষ্টার ডোজ |
৬ মাস |
০.৫ এম এল চামড়ার নীচে |
-২ডিগ্রি থেকে ৮ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬মাস |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
হাঁস-মুরগির কলেরা:
কলেরা ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ। হাঁস-মুরগি ২মাস বা তদুর্ধ বয়সে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
রোগের লক্ষণ:
পাতলা পায়খানা, ক্ষুধা মন্দা, মুখ দিয়ে পানি ঝরা, পালক এলোমেলো অবস্থায় বসে থাকা, মাথার ঝুটি নীলাভ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণির প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
হাঁস-মুরগির কলেরা |
ফাউল কলেরা টিকা |
২ মাস বয়সী হাঁস-মুরগি |
৬ মাস
|
ক. অয়েল এডজুভেন্ট টিকা: ১ এম. এল চামড়ার নীচে। ২১ দিন পর বুষ্টার ডোজ। খ. এলাম অধ:পতিত টিকা: একই মাত্রায় মাংসে প্রয়োগ করতে হয়। |
-৪ডিগ্রি থেকে ৮ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬ মাস। |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |
ডাকপ্লেগ:
ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। সব বয়সের হাঁসেই মহামারী আকারে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের লক্ষণ:
মৃত্যুর হার ১০০ ভাগ। আক্রান্ত হাঁস দাঁড়াতে পারে না অথবা খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে এবং সাঁতার কাটতে চায় না। আক্রান্ত হাঁসার পুরুষাঙ্গ বাইরে ঝুলতে দেখা যায়। পানি পিপাসা বৃদ্ধি পায়, পালকগুলো এলোমেলো হয়ে থাকে এবং ঝিমায়, পাখা মাটির সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসে থাকে।
রোগের নাম |
হাঁস-মুরগির টিকার নাম |
প্রাণির প্রজাতি ও টিকা প্রয়োগের বয়স |
টিকার কার্যকাল |
টিকার মাত্রা ও প্রয়োগ পথ |
সংরক্ষণ |
প্রাপ্তি স্থান ও মূল্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
৭ |
ডাকপ্লেগ |
ডাকপ্লেগ টিকা |
৩ সপ্তাহ বা তদুর্ধ |
৬ মাস |
১০০ সি.সি. ডিষ্টিলড ওয়াটারে মিশানোর পর ১ এম.এল বুকের মাংসে |
-০৫ডিগ্রি থেকে ০ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ৬ মাস, ৪ডিগ্রি থেকে ৯ ডিগ্রি সেঃ তাপমাত্রায় ১ মাস, বরফসহ থার্মোফ্লাক্সে ৭ দিন |
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর |