গুজি আইড় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা
গুজি আইড় মাছ গুইজ্জা আইড় ও গুজি নামেও পরিচিত। স্বাদুপানির বড় ক্যাটফিশদের মধ্যে এটি অন্যতম সুস্বাদু মাছ। এক সময়ে নদ-নদী, খাল-বিল জলাভূমিসহ স্বাদুপানির অন্যান্য জলাশয়ে এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। পূর্বের ন্যায় এ মাছের প্রাপ্যতা আগের মতো না থাকলেও বর্তমানে কিছু বড় নদী যেমন যমুনা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, কংস সোমেশ্বরী, সিলেট-ময়মনসিংহের হাওড় ও কিছু বড় বিলে মাছটি পাওয়া যায়। স্বাদু পানিতে মূলত পাওয়া গেলেও মাঝে মাঝে আধা লবণাক্ত পানিতেও এদের পাওয়া যায়। তবে মোহনার আধা লবণাক্ত পানিতেও এদের দেখা যায়। প্রাপ্য ক্যাটফিশদের মধ্যেই মাছটি খুব জনপ্রিয় এবং বাজারে এ মাছের সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে বাজারমূল্যে কার্পজাতীয় মাছের তুলনায় অনেক বেশি। বিপন্ন প্রজাতির এই মাছ নিয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেশনা ইনস্টিটিউট গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করে এবং প্রাকৃতিক প্রজননে সফলতা অর্জন করেছে। ইদানিং এই মাছ চাষে চাষি ও উদ্যোক্তাগণ আগ্রহ প্রকাশ করছে।
প্রাকৃতিক প্রজনন
পরিপক্কতা: গুজি আইড় মাছ সাধারনত ২-৪ বছরের মধ্যে পরিপক্কতা লাভ করে। তবে ৩-৫ কেজি ওজনের মাছ প্রজননের জন্য বেশি উপযোগী এবং গুনগত মানের পোনা পাওয়া যাবে। গুজি আইড় মার্চ-এপ্রিলে পরিপক্ক হতে শুরু করে।
ডিমের সংখ্যা: দেশীয় স্বাদুপানির অন্যান্য মাছের মতই আইড় মাছের ডিমের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক। মাছের দৈর্ঘ্য ও বয়সের ওপর নির্ভর করে সর্বনিম্ন ২০০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০,০০০ পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। মাছের দৈর্ঘ্য ও ডিম্বাশয়ের ওজন যদি বেশি হয় তবে ডিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
প্রজননকাল: এপ্রিল-মে মাসে যখন বৃষ্টি শুরু হতে থাকে অথবা বর্ষার শুরুতে প্রজনন করে। অনেক ক্ষেত্রে মার্চ মাসেও এটি প্রজনন করে থাকে। পরবর্তীতে জুলাই-আগস্ট মাসে ডিম ছাড়তে শুরু করে। প্রজননকাল অনেক দীর্ঘ হওয়ায় বছরে দুইবার প্রজনন করতে পারে।
ব্রুড মাছ সংগ্রহ ও পরিচর্যা
প্রজননক্ষম মাছ সনাক্তকরণ: স্ত্রী মাছের সাথে পুরুষ মাছটি তুলনা করলে দেখা যায় যে, পরিপক্ক পুরুষ মাছের বাইরের দিকে একটি সুস্থ সবল উদগত অংশ দেখা যায় যা স্ত্রী মাছের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। অন্য দিকে ইউরিজ্যানিটাল পোরের উপরে অবস্থান করে যা স্ত্রী মাছে নেই। স্ত্রী-মাছের জেনিটাল প্যাপিলা গোলাকার ও পেট যথেষ্ট ফোলা থাকে। স্ত্রী মাছের পায়ু পথ লালচে ও ফোলা থাকে। স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের চেয়ে আকারে বড় হয়।
পুকুরে প্রাকৃতিক প্রজনন
পোনার নার্সারি ব্যবস্থাপনা
পোনার নর্সারী নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণে করা হয়
রেণু মজুদের পর নিম্নবর্ণিত সারণি অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে:
সারণি ১: নার্সারি পুকুরে খাদ্য সরবরাহের তালিকা:
সময় |
রেণুর ওজন |
খাদ্য |
১-৩ দিন |
১০০ গ্রাম |
৩ কেজি ময়দা ও ১৫ টি সিদ্ধ ডিমের কুসুম একত্রে মিশিয়ে দিনে দুই বার প্রয়োগ করতে হবে। |
৪-২০ দিন |
১০০ গ্রাম |
দেহের ওজনের ৩০% স্টার্টার ফিড সকাল ও বিকালে দিতে হবে। |
২১-৩৬ দিন |
১০০ গ্রাম |
দেহের ওজনের ২০% স্টার্টার ফিড সকাল ও বিকালে দিতে হবে। |
৩৭-৫২ দিন |
১০০ গ্রাম |
দেহের ওজনের ১৫% স্টার্টার ফিড সকাল ও বিকালে দিতে হবে। |
৫৩-৬৯ দিন |
১০০ গ্রাম |
দেহের ওজনের ১০% স্টার্টার ফিড সকাল ও বিকালে দিতে হবে। |
গুজি মাছের চাষ পদ্ধতি
পুকুর প্রস্তুতি
পোনা মজুদ ও চাষ ব্যবস্থাপনা
গুজি আইড়-অন্যান্য ক্যাটফিস-কার্প মিশ্রচাষে শতাংশ প্রতি ঘনত্ব:
প্রজাতি |
পদ্ধতি-১ |
পদ্ধতি-২ |
পদ্ধতি-৩ |
গুজি আইড় |
৪০ |
৬৫ |
৮০ |
শিং |
৪০ |
৪০ |
৪০ |
গুলশা |
৪০ |
৪০ |
৪০ |
রুই/কাতলা |
১০ |
১০ |
১০ |
মাগুর |
১০ |
১০ |
১০ |
সর্বমোট |
১৪০ |
১৬৫ |
১৮০ |
খাদ্য ব্যবস্থাপনা
মাছ আহরণ
পোনা মজুদের ১০-১২ মাস পর বাজার দর যাচাই করে অল্প পরিমাণে মাছ সংগ্রহ করে বাজারে নেয়া যেতে পারে। প্রথম আহরণ করা হলে ১৫-৩০% হারে বড় সাইজের পোনা মজুদ করতে হবে। পরবর্তীতে মাছ আহরণের জন্যে প্রথমে বেড় জাল এবং পরে পুকুর শুকিয়ে সমস্ত মাছ ধরার ব্যবস্থা নিতে হবে।