গাভী পালন
পশু-পাখি প্রকৃতির বাসিন্দা হয়ে যতদিন চরে খেয়েছে ততদিন তার প্রয়োজনীয় খাদ্য সে নিজেই সংগ্রহ করেছে। মানুষ তার প্রয়োজনে যখন তাকে গৃহপালিত করেছে তখন থেকেই তার খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে মানুষকে ভাবতে হয়েছে ,তৈরী করতে হয়েছে এগুলোর উপকরণ । পশু-পাখি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শতকরা ৬৫-৭০ ভাগ খরচ হয় খাদ্যের জন্য বাকী অংশ বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদির জন্য ব্যয় হয়।
পশু-পাখি সম্পদের খাদ্য তৈরি ও সরবরাহ পশু-পাখির প্রয়োজন অনুসারে, স্বল্প মূল্যে এবং সঠিক পন্থায় না হলে এ শিল্প হতে মুনাফা অর্জন খুব কঠিন হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে পশু-পাখি একটি জীবন্ত শিল্প কারখানা যার কাঁচামাল সাধারণ খাদ্য বস্তু হলেও তা হতে যা উৎপাদন করে তা মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য বা ব্যবহার্য বস্তু।
বাসস্থান :
আমাদের আবহাওয়ার আলোকে ঘরে প্রচুর আলো বাতাস চলাচলের জন্য ঘরটি উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া বাঞ্চনীয়। কোন অবস্থাতেই যেন ঘরে স্যাঁতস্যাতে অবস্থা না থাকে । এতে ঘরের মেঝটি ইট বিছানো থাকলে ভাল হয়। ঘরের দুর্গন্ধ ও মশা-মাছি দমনের জন্য মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক দ্বারা ধোয়া প্রয়োজন।
একসারি বিশিষ্ট ঘর : অল্প সংখ্যক গবাদি পশুর জন্য একটি লম্বা সারিতে বেঁধে পালনের জন্য এই ঘর তৈরি করা হয়। প্রতিটি পশুকে পৃথক রাখার জন্য জিআই পাইপ দিয়ে পার্টিশন দেয়া হয়।
দুই সারি বিশিষ্ট ঘর : অল্প জায়গায় অধিক পশুপালনের জন্য এ ধরণের ঘর তৈরি করা হয়। এ ধরণের ঘরে পশুকে দু ভাবে রাখা যায়, মুখোমুখি পদ্ধতি ও বাহির মুখ পদ্ধতি । বাহির মুখ পদ্ধতিতে দুই সারি পশু বাহির মুখি থাকে। দুইসারি খাবারের পাত্রের বাহিরের দিকে ৩ ফুট চওড়া রাস্তা থাকে-যা পাত্রে খাবার দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়, একটি গরুর জন্য দাঁড়ানোর জায়গা ৮ ফুট , পাশের জায়গা ৩.৫ ফুট। একই সাথে দুইসারি পশুকে সহজে খাবার ও পানি সরবরাহ করা যায়, দুধ দোহনের জন্য অধিকতর আলো পাওয়া যায়, পশু নিজ জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে । পরিচর্যাকারী সহজে চলাফেরা করতে পারে।
খাদ্য ও পুষ্টি :
১. আঁশ জাতীয় খাদ্য : শুষ্ক আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা ১০-১৫ ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমন-বিভিন্ন প্রকার খড় । রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্যে শতকরা ৭০-৮৫ ভাগ পানি বা জলীয় অংশ থাকে যেমন:-কাঁচা ঘাস, লতাগুল্ম, বিভিন্ন গাছের পাতা, মাসকলাই, খেসারী ইত্যাদি।
২. দানাদার জাতীয় খাদ্য : বিভিন্ন প্রকার ডাল জাতীয় শস্যদানা ও শস্যদানার উপজাত। যেমন:- ডালের ভুসি, গমের ভুসি, খৈল,চালের কুঁড়া ইত্যাদি।
৩. খনিজ উপাদান: যেমন : লবণ,লাইমস্টোন,মনো-ক্যালসিয়াম ফসফেট,ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ইত্যাদি।
৪. ফিড সাপ্লিমেন্ট/প্রিমিক্স : ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স, এমানো এসিড, অর্গানিক এসিড, এনজাইম ইত্যাদি।
গাভীর সুষম খাদ্য :-
গাভিকে দৈনিক প্রয়োজনীয় অনুপাতে খড়,কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যের মিশ্রন সরবরাহ করতে হবে। ৩০০ কেজি ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক-
১.উচ্চমান সম্পন্ন কাঁচা (সবুজ) ঘাসঃ ১০-১৫ কেজি।
২.খড়ঃ ৩-৪ কেজি
৩. ১৮%-২০% প্রোটিন সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের মিশ্রন ২-৩ কেজি সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার খাদ্যের আদর্শ নমুনা নিম্নরূপ :
উপাদান |
১নং নমুনা |
২ নং নমুনা |
৩ নং নমুনা |
গমের ভূষি |
৩০ কেজি |
৩৫ কেজি |
২০ কেজি |
চালের কুঁড়া |
১০ কেজি |
১৫ কেজি |
২০ কেজি |
খেসারী ভূষি |
২৬ কেজি |
২০ কেজি |
২০ কেজি |
ভাঙ্গা ছোলা |
১০ কেজি |
১০ কেজি |
১৬ কেজি |
খৈল |
২০ কেজি |
১৬ কেজি |
২০ কেজি |
ঝিনুকের পাউডার/হাড়ের গুড়া |
০৩ কেজি |
০৩ কেজি |
০৩ কেজি |
লবণ (অতিরিক্ত) |
০১ কেজি |
০১ কেজি |
০১ কেজি |
ডিবি ভিটামিন |
১০০ গ্রাম |
১০০ গ্রাম |
১০০ গ্রাম |
নিয়ম :
১. ১০০ কেজি ওজনের গাভীকে প্রতিদিন মিশ্রণের ৩ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
২.গাভী গর্ভবতী হলে ৫ম মাস থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত ১দশমিক ৫ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
৩. দুধালো হলে প্রতি ২ দশমিক ৫ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
সাধারণত গরুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য ওজনের শতকরা ২ ভাগ আঁশ জাতীয় খাদ্য,শতকরা ১ ভাগ দানাদার জাতীয় খাদ্য ও ৪ ভাগ রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। অর্থাৎ গাভীর প্রাথমিক ওজন ২০০ কেজি হলে উক্ত গাভীর দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার জন্য ৪ কেজি শুষ্ক আঁশ জাতীয়,২ কেজি দানাদার জাতীয় এবং ৮ কেজি রসালো আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
পালন ব্যবস্থাপনা :
গাভীর দৈনন্দিন পরিচর্যা :১. প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাদ্য প্রদান করতে হবে, ২.পরিমিত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, ৩. নিয়মিত গাভীকে গোসল করাতে হবে, ৪. গাভীর থাকার স্থান পরিস্কার ও শুস্ক রাখতে হবে, ৫. গোবর ও মূত্র নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে, ৬. গাভীর ঘর সংলগ্ন ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে, ৭. খাদ্য সরবরাহের পূর্বে খাদ্যের পাত্র পরিস্কার করতে হবে, ৮. খাদ্য সংরক্ষণ ঘর পরিস্কার করতে হবে, ৯. শুস্ক আঁশ জাতীয় খাদ্য সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে অর্থাৎ ছোট আকারে কেটে দিলে ভালো হয়, ১০. দানাদার খাদ্য সঠিকভাবে ভেঙে দিতে হবে, ১১. ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে হবে, ১২. ২-৪ মাস পর পর পশু চিকিৎসকের সহায়তায় গোবর পরীক্ষা করে দেখতে হবে গাভী কৃমি আক্রান্ত কিনা । প্রয়োজনে খামারে কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে, ১৩. নিয়মিত রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যা : খামার স্থাপন করে লাভবান হতে শংকর জাতের অথবা দেশী উন্নত জাতের ও অধিক উৎপাদনশীল গাভী পালন করা উচিত । জন্মের পর প্রথমেই বাসস্থানের পাশেই শুকনা জায়গায় বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে শুকনা খড় বিছিয়ে বাছুরের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে । কয়েকদিন পর পর ঘর পরিস্কার করে পুরনো খড় ফেলে দিয়ে অথবা রোদে শুকিয়ে নতুন করে দিতে হবে।
বাছুরের খাদ্য ও পুষ্টি : জন্মের পর প্রথম তিন মাস বাছুরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় পুষ্টির অভাব হলে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যৌবন প্রাপ্তি দীর্ঘায়িত হয় অর্থাৎ গর্ভধারণ ক্ষমতা বিলম্বিত হয় বলে খামারীর ক্ষতির কারণ হয়।
দুধ : সাধারণত একটি বাছুরকে তার শরীরের ওজনের ১০% ভাগ দুধ খাওয়াতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে জন্মের পর প্রথম ৫-৭ দিন বাছুরকে যেন অবশ্যই শালদুধ খাওয়ানো হয়। ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ে দুধ খাওয়াতে হয় । পরবর্তী সময়ে দৈনিক ২ বেলা নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ খাওয়ানোই যথেষ্ট কেননা এ সময়ে বাছুর আঁশ ও দানাদার খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। একটি বাছুরকে প্রতিদিন নিম্নলিখিত মাত্রায় দুধ খাওয়ানো উচিত:
বয়স |
১ম সপ্তাহ |
২য় সপ্তাহ |
৩য়-১২তম সপ্তাহ |
১৩-১৬ সপ্তাহ |
১৭-২০ সপ্তাহ |
দুধ ছাড়া পর্যন্ত |
দুধের পরিমাণ |
২ লিটার |
৩ লিটার |
৪ লিটার |
৩ লিটার |
২ লিটার |
১ লিটার |
বাছুরের জন্য আঁশ ও দানাদার খাদ্য : বাছুরকে জন্মের ১ মাস পরেই কিছু কিছু কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করে তুলতে হয়। ২ মাস বয়স হতে পরিমিত সহজপাচ্য আঁশ জাতীয় খাদ্য এবং দৈনিক ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
বাছুরের জন্য দানাদার খাদ্য |
বাছুরের জন্য আঁশ জাতীয় খাদ্য : |
|||||
খাদ্য উপাদান |
পরিমাণ |
|
বয়স |
কাঁচা ঘাস |
খড় |
|
নমুনা-১ |
নমুনা-২ |
৬-৯ মাস |
|
৪-৫ কেজি |
১-২ কেজি |
|
গমের ভূমি |
৩.৫ কেজি |
৬.৫ কেজি |
৯- ১২ মাস |
৫-৬ কেজি |
২-৩ কেজি |
|
খেসারী ভাঙ্গা |
১.৫ কেজি |
২.৫ কেজি |
১৩ মাস-গর্ভধারণ পর্যন্ত |
৬-৮ কেজি |
৩-৪ কেজি |
|
ছোলা ভাঙ্গা |
১.০ কেজি |
|
|
|
|
|
গম/ভূট্টা ভাঙ্গ |
২.৫ কেজি |
|
|
|
|
|
তিলের খৈল |
১.০ কেজি |
৫০০ গ্রাম |
|
|
|
|
খনিজ মিশ্রণ |
৪০০ গ্রাম |
৪০০ গ্রাম |
|
|
|
|
লবণ |
১০০ গ্রাম |
১০০ গ্রাম |
|
|
|
|
সর্বমোট = |
১০ কেজি |
১০ কেজি |
|
|
|
বয়স অনুসারে ক্রমান্বয়ে দানাদার খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪ মাস বয়সে দৈনিক প্রায় ৭৫০ গ্রাম, ৬-৯ মাস বয়স পর্যন্ত ১ কেজি এবং এক বৎসর বয়সে দৈনিক ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। অনুরূপ কাঁচা ঘাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনিক ৬-৮ কেজি পর্যন্ত দিতে হবে।
বাছুরের স্বাস্থ্য পরিচর্যা : কতিপয় রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে বাছুরের মালিককে কিছু রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। বাছুরের সাধারণ রোগ হলো-সাদা উদরাময় বা কাফ স্কাউর, নেভাল ইল বা নাভীর রোগ, সর্দি বা ঠান্ডা লাগা, উদরাময় বা ডায়রিয়া, কৃমি , গিরা রোগ ইত্যাদি । প্রতিটি টিকা প্রদানের মাঝে কমপক্ষে ১৪ দিন অবশ্যই বিরতি দিতে হবে।
বাছুরের বয়স টিকা প্রদান ও কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর তালিকা :
বাছুরের বয়স |
টিকা |
কৃমির ঔষধ |
মন্তব্য |
৭-১২ দিন |
- |
Piperazin citrale |
|
৪৫ দিন |
ক্ষুরা রোগ |
- |
৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ |
৪ মাস |
ক্ষুরা রোগ |
Albendazole |
৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ |
৬ মাস |
বাদলা (BQ) |
- |
প্রতি বছরে ১ বার |
৬ মাস ২১ দিন |
তড়কা(Anthrax) |
- |
প্রতি বছরে ১ বার |
৭ মাস ১৪ দিন |
গলাফুলা(HS) |
- |
প্রতি বছরে ১ বার |
৮ মাস |
- |
Triclabendazole |
বছরে ২ বার |
১০ মাস |
ক্ষুরা রোগ |
- |
৬ সিসি করে চামড়ার নীচে প্রয়োগ |
প্রজনন ব্যবস্থাপনা : প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাভী গর্ভধারণের জন্য গরম হয় বা ডাকে আসে।
গাভী বা বকনার ডাকে আসার বা গরম হওয়ার লক্ষণ: ১. প্রতিটি গাভী স্বাভাবিক নিয়মে ১৮ থেকে ২৪ দিন বিরতিতে ঋতুচক্রে ফিরে আসে,২. সাধারণত বেশিরভাগ গাভী রাতে ডাকে আসতে দেখা যায়, ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাকে আসার লক্ষণ বোঝা বেশ দুরুহ হয়ে পড়ে, ৩. গাভীর ডাকে থাকা অবস্থা প্রায় ২ থেকে ১৮ ঘন্টা স্থায়ী হয় । এ সময়ে প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘন্টা গাভী অস্থির থাকে , তার যৌনদ্বার দিয়ে স্বচ্ছ সুতোর ন্যায় আঠাযুক্ত বিজল পড়ে এবং অন্য গাভীর উপর লাফিয়ে উঠতে চেষ্টা করে ,৪. চূড়ান্ত ডাকে আসার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো চূড়ান্ত ডাকে আসা গাভীর উপর খামারের অন্য গাভী লাফিয়ে উঠলে সে নীরব থাকে। সাধারণত ডাকের লক্ষণ শুরু হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা পর চূড়ান্ত ডাক আসে, ৫. অপুষ্টি , আবহাওয়া, জলবায়ু, জাতের প্রভাব এবং বিশেষ করে প্রসবের পর ২/৩ ঋতুচক্রের সময় অনেক গাভীর ডাকে আসার লক্ষণ খুবই মৃদুভাবে প্রকাশ পায়। এসব ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ডাকের লক্ষণগুলি কমপক্ষে ২ ঘন্টা পর পর কাছ থেকে নজর রাখতে হয়, ৬. লেজের গোড়া বা তার আশপাশের জায়গায় শুকনা আঁঠালো পদার্থ লেগে আছে কিনা তা দেখতে হবে, ৭. এছাড়া আগের মাসের ডাকে আসার সঠিক দিনক্ষণ মনে রেখে সে অনুযায়ী বর্তমান ১৮ দিন মিলিয়ে অথবা কোনো ষাঁড়ের সাথে রেখে এ ধরণের মৃদু ডাকে আসা গাভী সহজে শনাক্ত করা যায়।
প্রজননের সঠিক সময় : কোনো গাভী রাতে গরম হয়েছে বোঝা গেলে তাকে পরদিন সকালে একবার এবং আরও নিশ্চিত হবার জন্য ঐদিন বিকেলের মধ্যে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে। একইভাবে যে গাভী সকালে ডাক এসেছে বোঝা যাবে তাকে ঐদিন বিকেলে ও পরদিন সকালে আরেকবার প্রজনন করাতে হবে । এ নিয়ম মেনে চললে গাভীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
গাভী বা বকনার দেরীতে ডাকে আসার বা গরম হওয়ার কারণ : অনেক খামারের বকনা অনেক দেরিতে বা কখনোই ডাকে আসে না এবং প্রসবের পর অনেক গাভীর ডাক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে । এ সমস্যার অন্যতম কারণগুলি হলো :-
১. পুষ্টি-হীনতা ও গাভীর ওলানের বাঁটে মুখ দিয়ে বাছুরের দীর্ঘক্ষণ ধরে চুষে ঘন ঘন দুধ খাওয়া ।
২. দুগ্ধবতী গাভীর প্রসব পরবর্তীতে জননাঙ্গের ব্যাধি, কৃমি, দৈনিক দুধ উৎপাদনের হার ইত্যাদি।
৩. বাছুরের দুধ ছাড়ানোর সময় দীর্ঘ হলেও গাভীর প্রসবের পর পুনর্বার বাচ্চা ধারণক্ষমতা ফিরে পেতে দেরি হয়।
গবাদিপশু কৃত্রিম প্রজনন : সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে । কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাঁড়ের শুক্রাণু সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে হয । বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ষাঁড়ের অভাব থাকায় কৃত্রিম প্রজনন জরুরি হয়ে পড়েছে।
১. গাভী ডাকে আসার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে গাভীকে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হবে।
২. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশ সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভী ষাঁড়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় না।
৩. অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উন্নত জাতের ষাঁড় নির্বাচন করা যায় এবং উন্নত জাতের ষাঁড়ের বীজ দ্বারা অতি দ্রুত ব্যাপক ভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু তৈরি করা সম্ভব।
৪. প্রজনন কাজে ব্যবহারের জন্য বাড়তি ষাঁড় পালনের প্রয়োজন হয় না এবং যে কোন সময় যে কোন স্থানে কৃত্রিম প্রজনন করা যায়।
৫. নির্বাচিত ষাঁড়ের সিমেন (বীজ) দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনমত যে কোন সময় ব্যবহার করা যায় । প্রয়োজন হলে বিদেশ থেকে উন্নত জাতের ষাঁড়ের পরিবর্তে অল্প খরচে সিমেন আমদানী করা যায়।