গরু

বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ

Md Alamin Sarker | ১৫ মে ২০২৪

 

ভূমিকা:

গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অপুষ্ট বা দুর্বল গরু বা বাছুরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট বা উৎপাদন ক্ষমতা খুব কম সময়ে পুষিয়ে বাজারজাত করা হয়। গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার স্থাপন একটি লাভজনক ব্যবসা। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রাপ্ত গরু উৎপাদন ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারে কিভাবে লাভজনক মাংস উৎপাদন করা যায় সে লক্ষ্যকেই সামনে রেখে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। ষাড় ও বলদ এবং উৎপাদন ক্ষমতাহীন গাভীগুলোই মোটামুটি গো-মাংসের জন্য হৃষ্টপুষ্টকরণে ব্যবহার হয়ে থাকে।

গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কয়েকটি পর্বে বিভক্ত। পর্বগুলো হলো:

১. গরু ক্রয়

২. ক্রয়কৃত গরুর যত্ন

৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

৪. বাজারজাতকরণ

১। গরু ক্রয়: উপযুক্ত পশু ক্রয়ের উপর হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রযুক্তি নির্ভর করে। এজন্য নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো ব্যবহার করে হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য গরু নির্বাচন করা জরুরি।

ক. দৈহিক আকার বর্গরূপ হবে,

খ. গায়ের চামড়া ঢিলা, শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া,ঘাড় চওড়া এবং খাটো,

গ. পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত,

ঘ. পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটো ও মিলানো,

ঙ. গরু অপুষ্ট বা দুর্বল কিন্তু রোগা নয়,

চ. ২-৫ বৎসরের অথবা কমপক্ষে ২ দাঁতের এঁড়ে বা ষাঁড় গরু ক্রয়,

ছ. কালচে লাল বা কালো গরুর চাহিদা বেশী। সাদা গরুর চাহিদা কম,

জ. শংকর জাতের গরু অল্প সময়ে বড় হয়।

২। ক্রয়কৃত গরুর যত্ন: গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত গরুকে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো কৃমি মুক্তকরণ। এছাড়াও নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে।

* তড়কা, বাদলা, ক্ষুরারোগ ও গলাফুলা রোগের টিকা দিতে হবে,

* গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে,

* গরুর বাসস্থান শুষ্ক, আলো ও বাতাসময় এবং আরামদায়ক রাখতে হবে,

* গরুকে কোনো কাজ না করিয়ে প্রচুর বিশ্রামে রাখতে হবে।

ক. গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কর্মসূচী বাস্তবায়নে গবাদিপশু কৃমি মুক্তকরণ:

১. গোল কৃমির জন্য Tab. Albendazole ৬০০ মি. গ্রাম। প্রতি ৮০ কেজি ওজনের জন্য ১টি ট্যাবলেট কলা পাতায় মুড়ে অথবা পাকা কলার ভিতর ভরে খাওয়াতে হবে।

২. কলিজা কৃমি জন্য Tab. Triclabendazole ৯০০ মি. গ্রাম। প্রতি ৭৫ কেজি ওজনের জন্য ১টি ট্যাবলেট পানির সাথে মিশিয়ে অথবা কলাপাতায় মুড়ে অথবা ভাতের মাড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।

কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর ৩-৪ ঘন্টা পর্যন্ত গরুকে রোদে নেওয়া যাবে না। গোলকৃমির চিকিৎসার ১৫-২০ দিন পর কলিজা কৃমির চিকিৎসা করাতে হবে। প্রতিবার কৃমির ঔষধ খাওয়ানোর পর পরই পশুকে ডিবি ভিটামিন খাওয়াতে হবে।

খ. টিকা প্রদান:

FMD বা ক্ষুরা রোগ, তরকা, বাদলা, গলাফুলা রোগের টিকা নিকটস্থ প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে প্রদান করতে হবে।

গ. বাসস্থান:

  1. অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পরিষ্কার জায়গা গরুর বাসস্থান হিসেবে উত্তম;
  2. বৃষ্টির পানি এবং মূত্র যাতে গড়িয়ে চলে যায় সেজন্য বাসস্থান ঢালু হলে উত্তম;
  3. পানি শোষন করার জন্য খামারের মাটি বেলে বা দো-আঁশ হতে পারে;
  4. প্রতিটি গরুর জন্য ২০ বর্গফুট অর্থাৎ ৫ ফুট x ৪ ফুট জায়গার প্রয়োজন। ঘরের মেঝেটি পাকা ও ইটা বিছানো হতে হবে। ঘরের ভিতর গরুগুলি খোলা বা ছাড়া অবস্থায় রাখা যেতে পারে;
  5. সেডের উচ্চতা ১০ ফুট হবে। ঘরের দেয়াল ৩ ফুট পাকা বা বেড়ার হলে ভাল হয়;
  6. ঘরটি খোলামেলা হবে। প্রচুর আলো বাতাস চলাচল করতে পারবে এবং ঘরটি আলোকিত থাকবে;
  7. ঘরের পাশে ড্রেন থাকবে অর্থাৎ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভাল ও সুষ্ঠু হতে হবে।

৩। পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা: হৃষ্টপুষ্টকরণে গবাদিপশুর জন্য খাদ্য তালিকা বিশেষ ধরণের হতে হবে। কারণ গরু হৃষ্টপুষ্ট করার মোট খরচের শতকরা ৭০-৮০ ভাগই খাদ্য এবং পুষ্টির সাথে জড়িত। কম খরচে বেশী লাভ এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে খাদ্য খরচ হ্রাস করা না হলে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করা কষ্টকর ব্যাপার।

কম খাদ্য খরচে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ সরবরাহের জন্য নীচের বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

  1. কম মূল্যে সহজলভ্য খাদ্য উপকরণ ক্রয় করে খাদ্য তৈরী করা,
  2. প্রাপ্ত খাদ্যগুলো প্রয়োজনমত প্রক্রিয়াজাতকরণ,
  3. মৌসুমে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ সংগ্রহের পর মজুতকরণ,
  4. পশুর প্রয়োজনের ভিত্তিতে দৈনিক খাদ্য তালিকা প্রস্তুতকরণ ও সে মোতাবেক গরুকে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ,
  5. কোন পদ্ধতিতে খাদ্য সরবরাহ করা হবে তা নির্বাচন করা,
  6. খাদ্যজনিত রোগ দমনের ব্যবস্থা।

গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে দু'ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রশদ তৈরি করা হয়।

ক. আঁশ জাতীয় এবং খ. দানাদার

ক. আঁশ জাতীয়: আমাদের দেশে আঁশ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই খড়। ঋতু ও অঞ্চল ভেদে দেশী এবং উন্নত সবুজ ঘাসও পাওয়া যায়। হৃষ্টপুষ্টকরণে দু'ধরণের আঁশ জাতীয় খাদ্য ভিন্ন ভিন্ন বা এক সাথেও ব্যবহার হতে পারে। তবে উভয় প্রকার খাদ্যই প্রক্রিয়াজাত করা প্রয়োজন। ধানের খড় হৃষ্টপুষ্টকরণে ব্যবহারের জন্য ইউএমএস প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই উদ্ভাবিত হয়েছে। দানা সংগ্রহের পর তাজা ও সবুজ ভূট্টা গাছের উপরের অংশ ৩/৪ টুকরো করে সরাসরি খাওয়ানো যায়। সবুজ ঘাস খাওয়ানোর সময় শতকরা ১০ ভাগ চিটাগুড় সরাসরি মিশিয়ে দিলে ষাঁড় বা বলদের দৈহিক ওজন ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর মূলে বৈজ্ঞানিক কারণ বিদ্যমান। মূল কথা হলো গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে আমরা যদি সবুজ ঘাস ব্যবহার করি তাহলে খাওয়ানোর সময় শতকরা ১০ ভাগ চিটাগুড় ঘাসের সাথে সরাসরি মিশায়ে খাওয়াতে পারি। খামারি ভাইয়েরা ইউএমএস এবং চিটাগুড় মিশ্রিত সবুজ ঘাস বিভিন্ন ভাবে খাওয়াতে পারেন। অথবা দুটো খাদ্য মিশ্রণ করেও খাওয়াতে পারেন।

সারণি-১: আঁশ জাতীয় খাদ্য প্রস্তুতের জন্য:

                             সূত্র

                       খাদ্য

       শুস্ক পদার্থের ভিত্তিতে গঠন

     খাদ্যের ওজনের ভিত্তিতে গঠন

                        ইউএমএস

         খড়: চিটাগুড়া: ইউরিয়া

                 ৮২ : ১৫ : ৩

             ১০০ : ২২-৩০ : ৩

                          সংরক্ষিত

                 খড়: ইউরিয়া

                   ১০০ : ৪

                    ১০০ : ২

                    তাজা ও ভেজা খড়

               খড়: চিটাগুড়া

                    ৯০ : ১০

                  ১০০ : ৩-৫

                        সবুজ ঘাস

           সবুজ ঘাস: চিটাগুড়া

                   ১০০ : ১০

               ১০০: ৩.০-৩.৫

ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র (ইউ.এম.এস): ইউরিয়া, মোলাসেস ও খড় এর মিশ্রণকে সংক্ষেপে ইউ.এম.এস বলে। এই মিশ্রণটি শুকনা খড়ের পরিবর্তে প্রতিদিন গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়। মিশ্রণটিতে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার অনুপাত যথাক্রমে ৮২ : ১৫ : ৩।

প্রস্তুত পদ্ধতি: প্রথমে খড়, ইউরিয়া, মোলাসেস ও পানি সঠিক পরিমাণে মেপে নিতে হবে। মেপে নেয়া খড়গুলোকে ৩.০০-৪.০" করে কেটে নিতে হবে। মেপে নেয়া ইউরিয়া, মোলাসেস পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। কেটে নেয়া শুকনো খড়গুলোকে পরিস্কার পাকা মেঝে বা পলিথিনের উপর বিছাতে হবে। এবার পানি, ইউরিয়া ও মোলাসেসের দ্রবণ দিয়ে খড়গুলোকে ভালভাবে মিশালেই ইউ.এম.এস তৈরি হবে।

সাবধানতা: উপকরণগুলোর পরিমাণ কখনও কম বা বেশী করা যাবে না। একবার প্রস্তুত করার পর তা তিন দিনের বেশী রাখা যাবে না।

খ.দানাদার: আমাদের দেশে প্রাপ্ত দানাদার ব্যবহারে বিভিন্ন মিশ্রণ তৈরি করে আঁশ জাতীয় খাদ্যের অতিরিক্ত হিসেবে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।

সারণি-২: গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে ব্যবহারযোগ্য কিছু দানাদার মিশ্রণ:

খাদ্য উপাদান

নমুনা-১

নমুনা-২

নমুনা-৩

গমের ভূষি

২৮০ গ্রাম

২৯০ গ্রাম

২৮০ গ্রাম

চালের কুঁড়া

২৫০ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

১৫০ গ্রাম

তিলের খৈল

২০০ গ্রাম

২০০ গ্রাম

২২০ গ্রাম

চালের খুদ

--

১০০ গ্রাম

১০০ গ্রাম

কলাই/ছোলা (খেসারী/ মাটি/ছোলা/মটর কলাই)

২০০ গ্রাম

২০০ গ্রাম

২০০ গ্রাম

হাঁড়ের গুড়া/ডিসিপি

২০ গ্রাম

২০ গ্রাম

২০ গ্রাম

লবণ

৫০ গ্রাম

৪০ গ্রাম

৩০ গ্রাম

গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য গবাদিপশুকে নিম্নলিখিত দৈহিক ওজন হিসাবে খাদ্য খাওয়ানো উচিত।

খাদ্যের নাম

১০০ কেজির কম

১০০-১৫০ কেজি

১৫০-২০০ কেজি

ইউ এম এস অথবা শুধু খড়-ইউ এম বি

২ কেজি

৩ কেজি

৪ কেজি

সবুজ ঘাস

৪-৫ কেজি

৭-৮ কেজি

৮-১০ কেজি

দানাদার খাদ্য

২.৫-৩ কেজি

৩-৩.৫ কেজি

৪-৪.৫ কেজি

দৈহিক ওজন গ্রহণ: কর্মসূচী চলাকালে নিয়মিত গরুর ওজন নিতে হবে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনায় সাবধানতা:

১. গরুকে প্রচুর পরিমাণে দানাদার খাদ্য ও সরাসরি চিটাগুড় খাওয়ানোর ফলে অনেক সময় গরুর পেটে গ্যাস উৎপন্ন হয়। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দানাদার মিশ্রণ কমপক্ষে দিনে দু'বারে অথবা তিন বারে ভাগ করে সরবরাহ করতে হবে। টিচাগুড় গরুকে সরাসরি সরবরাহ না করে বিভিন্ন আঁশ জাতীয় খাদ্যের সহিত মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। গরু যদি গ্যাসে আক্রান্ত হয় তা হলে গরুর পুষ্টি প্রক্রিয়ায় ভীষণভাবে ক্ষতি করে। এ অবস্থায় গরুকে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে এবং নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. কোনক্রমেই দানাদার ইউরিয়া অথবা ইউরিয়া মিশ্রিত পানি যাতে গরু না খেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৩. এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দানাদার ইউরিয়া বা তার দ্রবণ গরু, বাছুর, ছাগল, ভেড়া বা যে কোন প্রাণীর জন্য বিষাক্ত। সুতরাং এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্চনীয়।

৪. হৃষ্টপুষ্টকরণ কাজে ব্যবহৃত গরু দ্বারা হালচাষ বা গাড়ি টানা, ফসল মাড়াই ইত্যাদি কাজ করানো যাবে না।

গরু মোটাতাজাকরণে পুষ্টিজনিত কিছু সমস্যা ও সমাধানের উপায়:

গরু যাতে রোগে আক্রান্ত না হয় সে জন্য রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ জন্য বিভিন্ন রোগের টিকা, কৃমিনাশক ইত্যাদি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হৃষ্টপুষ্টকরণের ক্ষেত্রে সাধারণত: এসিডোসিস, ব্লট ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়।

এসিডোসিস: গ্রাম-গঞ্জে বেশীর ভাগ মানুষ গরু লালন করে থাকেন। অনেকে গরুর খামার স্থাপন করেছেন। তাঁরা খাদ্য হিসেবে গরুকে প্রচুর পরিমাণ ভাত, দানাদার খাদ্য অথবা অনেক সময় চিটাগুড় সরাসরি খাইয়ে থাকেন। এ ধরনের খাদ্যগুলো একসঙ্গে বেশী পরিমাণ খাওয়ানোর ফলে গরুর পেটে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন হয়। এসিডের জন্য গরুর স্বাসকষ্ট হয়, পেটকামড়ায়, অস্বস্থিবোধ করে এবং পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায় ও অনেক সময় পেটে লাথি মারে ও শুয়ে পড়ে।

প্রতিরোধ: দানাদার খাদ্য দিনে ২/৩ বারে ভাগ করে খাওয়াতে হবে। চিটাগুড় সরাসরি খাওয়ানো পরিহার করে বিভিন্ন আঁশ জাতীয় খাদ্যের সাথে ব্যবহারের প্রযুক্তি অনুসারে খাওয়ানো যায় (পদ্ধতিগুলো সারণী-১ এ বর্ণনা করা হয়েছে)। ভাত অন্যান্য দানাদার মিশ্রনের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে খরচের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

চিকিৎসা: গরু এসিডোসিসে আক্রান্ত হলে হৃষ্টপুষ্টকরণের ক্ষেত্রে গরুর পুষ্টি প্রক্রিয়ায় ভীষণভাবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তাই এ ব্যাপারে তাড়াতাড়ি নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তবে গরুকে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং এন্টাসিড যেমন ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া এ্যান্টিবায়োটিক এবং স্যালাইন মুখে খাওয়ানো যেতে পারে।

ব্লট: ব্লটকে পেট ফুলা রোগ বলে। গ্রাম-গঞ্জে সাধারণত: ডাল জাতীয় ঘাস যেমন- খেসারি, মাসকলাই ইত্যাদি ঘাস কচি অবস্থায় বেশী খাওয়ানো হয়। এ ধরনের সবুজ ঘাস এককভাবে প্রচুর পরিমাণে খেলে গরুর পেটে গ্যাস হয়। এতে পেট ফুলে যায় এবং পুষ্টিরও অপচয় হয়।

প্রতিরোধ: সবুজ ডাল জাতীয় ঘাস অতিরিক্ত না খাওয়ানো এবং এ জাতীয় ঘাসের সাথে ১০-১৫ ভাগ খড় মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।

চিকিৎসা: ব্লট হয়ে গেলে যে কোন সময় বিপদ হতে পারে। তাই এ অবস্থায় নিকটস্থ পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে প্যারাফিন, তিল বা তিসির তেল এবং এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো যেতে পারে। বিপজ্জনক অবস্থায় পেট ক্যানুলা ব্যবহারে ছিদ্র করে দেয়া উচিত।

৪. বাজারজাতকরণ:

একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ করতে হয়। আমরা মোটামুটি ভাবে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে এ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারি। খামারীরা সময় ভেদে এবং বাজারের চাহিদা ও বেশী মূল্যের দিক নজর রেখে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। যেমন-কোরবানী ঈদের বাজারে গরুর চাহিদা ও উচ্চমূল্যে খামারীরা বেশী লাভবান হয়ে থাকেন।

গবাদিপশু হৃষ্ট-পুষ্টকরণে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত সুষম পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য উপাদানই যথেষ্ট, অন্য কোন উপকরণের প্রয়োজন নেই।

মাংসের জন্য গরু লালন-পালনে স্টেরয়েড ও হরমোন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও প্রাণিস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।