আইপিআরএস(ইন-পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত মাছ চাষের সর্বাধুনিক একটি প্রযুক্তি। একে বলা যায় মাছচাষের ক্ষেত্রে পুকুর, খাঁচা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অক্সিজেন খাদ্যের সুষম বন্টনেরেএকটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা। এর মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎ ও কৌশল ব্যবহার করে স্বল্প জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে মাছ চাষ করা হয়।
এ প্রযুক্তিতে বড় আকারের পুকুরে কংক্রিটের ছোট ছোট চ্যানেল তৈরি করা হয় যেখানে কৃত্রিমভাবে স্রোত সৃষ্টি করে অনেকটা নদী বা প্রাকৃতিক জলাশয়ের মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়। এসব সেল আবার বাইরের বড় পুকুরের সাথে সংপৃক্ত থাকে, যদিও মাছ সেই পুকুরে বেরিয়ে যেতে পারে না। এসব পুকুর থেকে পরিষ্কার পানি সেলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে। সেলের মধ্যে থাকা মাছগুলো স্রোতে ক্রমাগত সাঁতার কাটতে থাকে। নদীর মতো পরিবেশ পাওয়ার কারণে আইপিআরএস পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছের স্বাদ ও রং প্রায়ই নদীর মাছের মতোই হয়। এভাবে স্বল্প জায়গায় অনেক বেশি মাছ উৎপাদন করা যায়।
বাংলাদেশে আইপিআরএস এর প্রথম উদ্যোক্তা জনাব আকবর হোসেন বলেন, যেখানে ১ বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে ৩০০-৪০০ টি মাছচাষ করা হয় সেখানে ১ বিঘায় এ পদ্ধতিতে ১০,০০০ মাছ চাষ করা সম্ভব। অল্প জায়গায় এতো বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়; যা খুবই সময়োপযোগী। যেহেতু দেশে ভূমির পরিমাণ কম এবং ছোট দেশ, সেহেতু অল্প জায়গা হতে বেশি মাছ উৎপাদনে এই পদ্ধতি উপযোগী। এখানে ২৫ মিটার লম্বা, ৫ মিটার প্রস্থ এবং ২ মিটার গভীর অর্থাৎ ২৫০ কিউবিক মিটারের প্রতিটি চ্যানেল থেকে প্রায় ৩২ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
আরপিআইএস পদ্ধতিতে প্রতিটি চ্যানেলে ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের ৩০,০০০-৩৫,০০০ টি পোনা মজুদ করা যায়। মজুদকৃত মাছের ওজন ৫০০-৬০০ গ্রাম হলে বাজারজাত করা যায়। চাষকাল প্রায় ৩ মাস এবং বছরে প্রায় ৪ টি উৎপাদন চক্র সম্পন্ন করা যায়।
দেশের মাছের চাহিদা পূরণে হাজার হাজার পুকুর খননের পরিবর্তে কিছু সংখ্যক আইপিআরএস প্রযুক্তি ভিত্তিক মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা করলেই বছরে বিপুল পরিমাণ মাছ উৎপাদিত হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ মাছ আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব। দেশে মাছ উৎপাদনে এবং নদীর মাছের মতো স্বাদ পেতে আইপিআরএস পদ্ধতি নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন করবে, এমনটাই সংশ্লিষ্টদের ধারণা।