হাঁস পালন

গ্রামীণ পরিবেশে হাঁস পালন

MD NAYEM HOSSAIN | ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ভূমিকা:

বাংলাদেশ নদীমাতৃক কৃষিনির্ভর দেশ। এদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওর, পুকুর-ডোবা হাঁস পালনের জন্য উপযোগী। এছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু হাঁস পালনের জন্য অনুকূল। গ্রামবহুল এদেশে পারিবারিকভাবে হাঁস পালন একটি প্রথা। হাঁস পালন করে অল্প খরচে সহজেই অধিক আয় করা যায় কারণ হাঁস প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্যের অর্ধেকেরও বেশি পূরণ করতে পারে।

দেশে প্রচুর খাল-বিল, নদী-লালা থাকায় একজন খামারি সামান্য পরিমাণ খাদ্য প্রদান করে সারা বছরই লাভজনক ভাবে হাঁস পালন করতে পারেন। প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎসের মধ্যে হাঁসের মাংস ও ডিম অন্যতম। প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করে হাঁস পালন করলে উৎপাদন খরচ অনেক কম হবে।

হাঁসের জাত এবং জাতসমূহের বৈশিষ্ট্য:

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান হাঁস উৎপাদনকারী এলাকাগুলোতে যেমন নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এর নিচু এলাকা এবং অন্যান্য এলাকায় যেখানে অধিক সংখ্যক হাঁস পালন করা হয় সে সমস্ত এলাকায় প্রাপ্ত হাঁসের জাত ও তাদের শতকরা হার এবং

জাতসমূহের বৈশিষ্ট্য নিম্নরুপঃ-

 

জাত

শতকরা হার

হাঁসার ওজন(কেজি)

হাঁসির ওজন (কেজি)

প্রথম ডিম পাড়ার বয়স

প্রতি বছরে ডিম দেয়

প্রতি ডিমের ওজন

দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ

খাকি ক্যাস্পবেল

৪৫

২-২.৫০

১-১.৫

২০ সপ্তাহ

২৫০-৩০০ টি

৬৯ গ্রাম

১৭৬ গ্রাম

জিন্ডিং

২০

২.০০

১.৫০

১৮ সপ্তাহ

২৭০ টি

৬৮ গ্রাম

১৬০ গ্রাম

ইন্ডিয়ান রানার

২-২.৫০

১-২

২০ সপ্তাহ

২৫০-৩০০ টি

৬৬ গ্রাম

১৬৫ গ্রাম

দেশি

৩০

১.২৫-১.৫০

১.০০

২০ সপ্তাহ

৭০-৮০ টি

৪৫-৫০ গ্রাম

১৪০ গ্রাম

এছাড়া সারা দেশে পালিত হাঁসের মধ্যে দেশি জাতের হাঁসের ধিক্য দেখা যায়

হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিংকালীন ব্যবস্থাপনা:

বাঁচ্চা ফোটার পর থেকে ৫-৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করাই হচ্ছে ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা। ব্রুডিংকালে হাঁসের বাচ্চার পর্যাপ্ত যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় হাঁসের বাচ্চার মৃত্যুহার খুব বেশি। এই সময়ে হাঁসের বাচ্চার তাপ, আর্দ্রতা, আলো ও বায়ু চলাচল সঠিক হতে হবে। বাচ্চা পালনের ক্ষেত্রে প্রথম দিন থেকে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে নিম্মোক্তহারে (সারণী-১) তাপমাত্রা, বায়ু চলাচল ও আলো সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাচ্চার ঘর যেন সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সারণী- হাঁসের বাচ্চা ব্রুডিংকালে প্রয়োজনীয় কৃত্রিম তাপ, আলো বায়ূ চলাচল এবং হাঁসের বাচ্চার প্রাপ্তি স্থান:

বয়স (সপ্তাহ)

তাপমাত্রা(ফাঃ)

আলো প্রদান (ঘন্টা/দিন)

বায়ূ চলাচল

বাচ্চা প্রাপ্তি স্থান

সরকারি হাঁস প্রজনন খামারের নাম

 

৯৫

২০

ঘরে বায়ূ চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে ক্ষতিকর গ্যাস বেরিয়ে যাবে, আর্দ্রতা ঠিক থাকবে ও বাচ্চা সুস্থ থাকবে।

কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার, নারায়ণগঞ্জ

৯০

১৮

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, ফেনী

৮৫

১৪

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, নওগাঁ

৮০

১২

 আঞ্চলিক হাঁস 

প্রজন খামার, রাঙ্গামাটি

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, খুলনা আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, সুনামগঞ্জ

 

৭৫

১২

৭০

১২

ইহা ছাড়াও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তুষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত হাঁসের বাচ্চা খামারিরা ইচ্ছা করলে ক্রয় করতে পারেন।

 

হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

গ্রামাঞ্চলে হাঁস অর্ধ আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করা হয়। পুকুর, খাল-বিল, নদী ইত্যাদিতে হাঁস চড়ে বেড়ায় এবং এখান থেকেই খাদ্য সংগ্রহ করে। এই সমস্ত এলাকায় খাদ্য প্রাপ্তির উপর (যেমন শামুক, ঝিনুক ও অন্যান্য জলজ প্রাণী) তাদের উৎপাদন নির্ভর করে। অনেক খামারি চড়ে খাওয়ানোর পাশাপাশি চালের কুড়া, চাল ভাঙ্গা, গম ভাঙ্গা ইত্যাদি খেতে দেয়। এছাড়া দেখা গেছে, কোন কোন খামারিদের সুষম খাবার তৈরী ও খাওয়ানো পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। ফলে পরবর্তীতে হাঁসের ডিম উৎপাদন কম হয়। এ কারণেই খামারিদের জন্য হাঁসের খাদ্য সূত্র (সারণী-২) এ নমুনা হিসেবে প্রদান করা হল।