শুঁটকির উপকারিতা

শুঁটকির উপকারিতা

flidmofl1 | ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

শুঁটকি কি?

খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে অনেক পুরোনো একটি পদ্ধতি হচ্ছে রোদে শুকিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ। মাছ যখন শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়, তখন তাকে আমরা শুঁটকি বলে থাকি। মাছ রোদে শুকানো হলে মাছের যে জলীয় অংশ থাকে, তা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে জীবাণু জন্মাতে পারে না এবং মাছকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ভালো মানের সতেজ মাছ কোনো কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ ছাড়া শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে শুঁটকি সম্পূর্ণভাবে একটি প্রাকৃতিক খাবার হয়। শুঁটকির নিজস্ব ঘ্রাণ ও স্বাদ রয়েছে।

কোন কোন মাছে ভালো শুঁটকি হয়?

সাধারণত লইট্টা, ফাইশ্যা, রূপচান্দা, ছুরি, পোয়া, চিংড়ি, মলা, বাইল্যা, ম্যাকারেল, পুঁটি, কাঁচকি, ছোট টেংরা, চাপিলা, শোলা, গজার, টাকি ইত্যাদি প্রজাতির মাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুটকি উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে শুঁটকির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো চ্যাপা, কাঁচকি, লইট্টা, রূপচান্দা, চিংড়ি, ছুরি ইত্যাদি মাছের শুঁটকি।

শুঁটকি তৈরির এলাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লা ও নারাংশায় পঁচানো বা গ্যাঁজানোর মাধ্যমে চ্যাগা উকি তৈরি করা হয়। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালপুর, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর করা হয়। বাংলাদেশে সামুদ্রিক মাছ থেকে শুঁটকি তৈরির গুরুত্বপূর্ণ রজিদীর মাধবদীতে সবচেয়ে বেশি চ্যাপা শুটান তরি কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বাসে টের দুবলারচর ইত্যাদি। এছাড়াও চলনবিল এবং রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের শুঁটকি পাওয়া যায়

শুঁটকি উৎপাদনের সামগ্রিক প্রক্রিয়া

• শুঁটকি ব্যবসায়ী কর্তৃক নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন উৎস হতে শুঁটকি উৎপাদনের জন্য গুণগত মানসম্পন্ন কাঁচা মাছ সংগ্রহকরণ।

• সংগৃহীত কাঁচা মাছ বাছাইকরণ, নাড়ি-ভুঁড়ি অপসারণ এবং ধৌতকরণ।

• হলুদ ও লবণ (অনুপাতিকহারে) মিশ্রিত পানির মধ্যে নাড়ি-ভুঁড়ি অপসারিত কাঁচা মাছ ৩০-৪৫ মিনিট চুবানো:

পরবর্তীতে চুবানো কাঁচা মাছ গ্রিনহাউজ ড্রায়ার অথবা মেকানিক্যাল ড্রায়ারে সারিবদ্ধভাদা একাতে দেয়া এবং কিছু সময় ড্রায়ারের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা; অথবা সরাসরি সূর্যের আলোতে শুকানো। মাছ ভালভাবে শুকানোর পর অর্থাৎ মাছের শরীরে অর্থায় অংশের পরিমাণ ১২-১৫% হলেই তা শুঁটকি হিসেবে সংগ্রহ করা হয়।

• শুঁটকি দীর্ঘমেয়াদে যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য 'ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে' অথবা 'নাইট্রোজেন পদ্ধতিতে' প্যাকেটজাত করা যায়। প্যাকেটজাতকৃত শুঁটকি কমপক্ষে ০৬ (ছয়) মাস স্বাভাবিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। প্যাকেটজাত করা ছাড়াও শুঁটকি বাসার ফ্রিজে ০৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। রান্নার ক্ষেত্রে ফ্রিজ থেকে বের করে ১০-১৫ মিনিট কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে নিলে ভাল হয়।

শুঁটকির খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণ

 

প্রজাতির নাম

জলীয় অংশ (%)

স্নেহ (%)

প্রোটিন (%)

আঁশ (%)

শর্করা (%)

ছুরি শুঁটকি

২০.১৮

১৬.৭৯

৫৭.৩৯

৫.১৮

০.৪৬

লইট্টা শুঁটকি

১৯.২৯

১৩.৩৬

৬০.১৬

৬.৮৪

০.৩৫

রূপচান্দা শুঁটকি

২৫.০০

০৮.০৪

৫৫.৩৯

১০.০৮

১.৪৯

শুঁটকি কেন খাবো?

  • প্রোটিন: প্রজাতির উপর নির্ভর করে মাছে প্রোটিনের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত মাছের দেহের ওজনের ১৪-২২% প্রোটিন থাকে। কিন্তু শুঁটকিতে ৮০-৮৫% পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। শুটকিতে এই উপাদান থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • সোডিয়াম। শুঁটকিতে সঠিক মাত্রায় সোডিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাঁদের জন্য শুঁটকি বেশ উপকারী।
  • পটাশিয়াম: এটিও দেহের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। পটাশিয়াম দেহে পানির সমতা বজায় রাখে এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজকর্মে সাহায্য করে।
  • ফসফরাস: শুঁটকিতে ভালো পরিমাণ ফসফরাস থাকায় এটি আমাদের হাড়, দাঁত ও ডিএনএ এবং আরএনএ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ভিটামিন: রোদে শুকানো টাটকা শুঁটকিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ডি। এ ভিটামিন দেহের হাড়, দাঁত, নখের গঠন মজবুত করে।
  • গর্ভবতী ও ক্ষীণকায় ব্যক্তির জন্য শুঁটকি বেশ উপকারী।

ওজন কমাতে শুঁটকি মাছ

রাসায়নিক দ্রব্য মুক্ত টাটকা শুঁটকি যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। টাটকা শুঁটকিতে প্রচুর আমিষ থাকলেও এর ক্যালরির পরিমাণ খুব কম। শুঁটকিতে ক্যালরি কম থাকায় যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা খাদ্যতালিকায় এটি রাখতেপারেন।

সতর্কতা

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সময় প্রচুর পরিমাণে লবণ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাছাড়াও অনেকে ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি ব্যবহার করে থাকেন: যেগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বর্তমানে আমাদের দেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন করছেন। যদিও এগুলোর বাজার মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে। তবে সুখবর হলো সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং বর্তমানে তারা সীমিত পরিসরে লইট্টা, ছুরি ও রূপচান্দা শুঁটকি উৎপাদন শুরু করেছে এবং এগুলোর বাজারমূল্য অন্যানা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উৎপাদিত শুঁটকির তুলনায় কম।