বাংলাদেশে গুতুম মিঠাপানির একটি জনপ্রিয় মাছ। গুতুম মাছ এলাকাভেদে গুটিয়া, গোরকুন, পোয়া, পুইয়া ও গোতরা নামে পরিচিত। উত্তর জনপদে গোতরা, গোতা বা পুয়া নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lepidocephalus Guntea.মিঠা পানির জলাশয়ে বিশেষ করে পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদিতে যে মাছগুলো পাওয়া যায় তাদের মধ্যে গুতুম অন্যতম। মাছটি খুবই সুস্বাদু, মানব দেহের জন্য উপকারী অণুপুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এবং কাঁটা কম বিধায় সকলের নিকট প্রিয় ও খেতেও সহজ। এক সময় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছটি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যে, কিন্তু শস্য ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ জলাশয়ে শুকিয়ে মাছ ধরা, বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরন প্রাচুর্যতা ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। এমতাবস্থায় প্রজাতিটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, নার্সারী ব্যবস্থাপনা ও চাষের কলাকৌশলের উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, সৈয়দপুরে গবেষণা পরিচালনাকরে ২০১৭ সালে দেশে প্রথমবারে মত এ মাছটির কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও পোনা প্রতিপালন কলাকৌশল উদ্ভাবনে সফলতা অর্জিত হয়। পরবর্তীতে প্রযুক্তিটি প্রমিতকরণের মাধ্যমে ২০১৮-১৯ সালে চূড়ান্ত করা হয়।
গুতুম মাছের বৈশিষ্ট্যঃ
অর্থনৈতিক এবং স্বাদ ও পুষ্টিমান বিবেচনায় গুতুম মাছের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নিম্নে এ মাছের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:
গুতুম মাছের ব্রুড প্রতিপালন
কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন
গুতুম মাছের ব্রুড প্রতিপালন, কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশলের জন্য নিম্নের পদ্ধতিসমূহ অনুসরণ করা প্রয়োজন:
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
গুতুম মাছের ব্রুড মজুদ
খাদ্য প্রয়োগ ও পরিচর্যা
কৃত্রিম প্রজনন কৌশল:
হরমোন প্রয়োগ মাত্রা
সারণী-১: গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজননে একক মাত্রার হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়-যা নিম্নরূপ:
হরমোনের ধরণ |
প্রয়োগ মাত্রা |
|
|
পুরুষ গুতুম মাছ |
স্ত্রী গুতুম মাছ |
ওভোপিন(মি.লি./কেজি) |
১.০ |
২.০ |
গুতুম মাছের নার্সারি ব্যবস্থাপনা:
গুতুম মাছের নাসারি নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণে করা হয়।
নার্সারি পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
রেণু সংগ্রহ ও নার্সারিতে মজুদ
নার্সারিতে খাদ্য প্রয়োগ
হ্যাচারিতে উৎপাদিত ৭ দিন বয়সের রেণু পোনা নার্সারিতে মজুদের পর প্রতি ৭,০০০ টি পোনার জন্য খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা নিম্নরূপ:
পোনার বয়স (দিন) |
খাদ্যের প্রকার |
খাদ্য প্রয়োগের হার |
প্রয়োগ মাত্রা/দিন |
১-৩ |
সিদ্ধ ডিমের কুসুম |
২টি |
৩ বার |
৪-৭ |
ময়দার দ্রবণ |
৫০ গ্রাম |
৩ বার |
৮-১৫ |
নার্সারি খাদ্য (৩৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ) |
১০০ গ্রাম |
৩ বার |
১৬-২৩ |
নার্সারি খাদ্য (৩২-৩৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ) |
১৫০ গ্রাম |
৩ বার |
২৪-৩০ |
নার্সারি খাদ্য (৩২-৩৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ) |
৩০০ গ্রাম |
৩ বার |
ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা
পোনা উৎপাদন ও আহরণ
ইনস্টিটিউট কর্তৃক গবেষণালব্ধ কৌশল অনুসরণ করলে ব্যক্তি মালিকানাদীন ও সরকারি মৎস্য হ্যাচারীসমূহে গুতুম মাছের পোনা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গুতুম মাছের কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ করা গেলে চাষের মাধ্যমে এতদাঞ্চল তথা দেশে প্রজাতিটির উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে এবং বিপদাপন্ন অবস্থা তেকে এ প্রজাতিকে সুরক্ষা করা যাবে।