পশুপাখির জুনোটিক রোগ

জলাতঙ্ক

MD NAYEM HOSSAIN | ১২ মে ২০২৪

জলাতঙ্ক রোগ কি?

জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক প্রাণঘাতী ভাইরাসজনিত রোগ। প্রচলিত ধারণা মতে যা সাধারণত, ‘‘পাগলা’’ কুকুরের কামড় থেকে ‍ছড়ায়। মৃত্যুর হার শতকরা ১০০ ভাগ হলেও রোগটি শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য।

কিভাবে ছড়ায়ঃ

র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত প্রাণি যেমন কুকুর, বিড়াল, বাদুড়, শেয়াল এমনকি আক্রান্ত গরু-ছাগলের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে সুস্থ গবাদিপশুতে এবং মানুষে এ রোগটি ছড়ায়।

কুকুরের কামড় মাথার যত কাছে জলাতঙ্ক রোগটি তত দ্রুত আসে 

প্রাণিতে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণসমূহঃ

প্রাণিভেদে এবং রোগের প্রকৃতি (ক্ষিপ্ত বা প্যারালাইসিস) ও অবস্থাভেদে লক্ষণসমূহ পরিবর্তন হতে পারে;

  • আক্রমণাত্মক- যা কিছুই তার সামনে আসুক না কেন তাকেই কামড়াতে চাওয়া;
  • অস্বাভাবিক আচরণ- উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়ানো, অস্বাভাবিক ক্ষুধা;
  • গলার স্বর পরিবর্তন- বা ডাকে পরিবর্তন আসা, অতিরিক্ত লালা ঝরা এবং খাওয়া বা পানি পান করা বন্ধ হওয়া;
  • প্যারালাইসিস দেখা যাওয়া;
  • শ্বাসকষ্ট হয়ে মারা যাওয়া।

মানুষের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণঃ

আক্রান্ত হওয়ার কতদিন পর লক্ষণ প্রকাশ পাবে তা নিদির্ষ্ট করে না বলা গেলেও সাধারণত ১-৩ মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখা যায়।

অস্বাভাবিক আচরণঃ

 পানির পিপাসা বেড়ে যাওয়া, তবে পানি পান করতে না পারা। পানি দেখলেই ভয় পাওয়া;

 আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে ভয় আরো বেড়ে যাওয়া;

 খাবার খেতে খুবই কষ্ট হওয়া এবং খেতে না পারা;

 কণ্ঠস্বর কর্কশ হওয়া;

 কাঁপুনি, খিটখিটে মেজাজ এবং আক্রমণাত্মক আচরণ।

(জ্বর, বিভ্রান্তি, অস্বাভাবিক চলাফেরা, কাঁপুনি, জ্বালাপোড়া, কথায় জড়তা, দূর্বলতা)

মৌন আচরণঃ

আক্রান্ত স্থান একটু অবশ লাগা।

শরীর নিস্তেজ হয়ে ঝিমানো।

আক্রান্ত হলেঃ

 করণীয়

  1. আঁচড় বা কামড়ানোর স্থান ১৫ মিনিট ধরে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
  2. অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধক টিকা দিন।
  3. আপনার পোষা কুকুর, বিড়াল, বেজি বা বানরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধ টিকা দিন।

বর্জনীয়

ক্ষতস্থান ঢেকে রাখা যাবে না বা ব্যান্ডেজ করা যাবে না,

লবণ, গুড়, থালা ও পানি পড়া জলাতঙ্ক প্রতিরোধ করে না।

মানুষ বা গবাদিপশু জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুর বা অন্য কোন প্রাণির সংস্পর্শে এলে বা কামড় অথবা আঁচড় লাগলে টিকা দিতে হবে।

ক্ষতের ধরণ

ক্ষতের বিবরণ

টিকা

ক্যাটাগরি-১

অক্ষত চামড়ায় চেটে দেয়া বা স্পর্শ করা কিন্তু কোন আঁচড় বা ক্ষত হবে না

কোন টিকা দিতে হবে না।

ক্যাটাগরি-২

আঁচড়/ক্ষত থাকবে কিন্তু রক্তক্ষরণ নাই

এন্টি র‌্যাবিস ভ্যাক্সিন

ক্যাটাগরি-৩

ক্ষত ও রক্তক্ষরণ দুটোই থাকবে

এন্টি র‌্যাবিস ভ্যাক্সিন ও এন্টি র‌্যাবিস সিরাম

 

দেশের জেলা সদরে অবস্থিত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মানুষকে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের এই টিকা প্রদান করা হয়। কোন প্রাণি আক্রান্ত হলে নিকটস্থ উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোষা বা গৃহপালিত বিড়াল বা কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে। উক্ত টিকা বিষয়ে সহযোগিতা নিতে নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

৫ যে সব কাজ করা বারণঃ

১. দুটো প্রাণি ঝগড়া করার সময় তাদের আলাদা করতে যাবেন না

২. তাদেরকে ভয় দেখাবেন না

৩. অপরিচিত প্রাণির খুব কাছে যাবেন না

৪. তাদেরকে রাগাবেন না

৫. খাওয়া বা ঘুমের সময় বিরক্ত করবেন না

জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে সচেতন হোন আক্রান্ত হবার আগে ও পরে প্রতিরোধক টিকা নিন।