সাইলেজ (Silage) : গোখাদ্য সংকটে সমাধান
সাইলেজ আধুনিক খামারিদের কাছে খুবই পরিচিত পদ্ধতি। সাইলেজ মূলত সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করার একটি পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সবুজ ঘাসের পুষ্টি উপাদান সঠিক রেখে বায়ু শূন্য অবস্থায় সবুজ ঘাসকে ভবিষ্যতের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখার প্রক্রিয়াকে সাইলেজ বলা হয়।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাত ক্রমশ বর্ধমান। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সফল অংশীদার। এই খাতে মানুষের আত্মকর্মসংস্থান বাড়ছে। দেশের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা এখন দেশের উৎপাদিত গবাদিপশু থেকেই পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের চারণভূমির পরিমাণ দিন দিন ক্রমশই কমছে। দানাদার খাদ্যের দামও ক্রমাগত বাড়ছে। এমন অবস্থায় খামারিদের প্রাণিখাদ্য বিশেষ করে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ঘাস সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ঘাসের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সাইলেজ।
সাইলেজের উপকারিতা : সাইলেজ পুষ্টিকর একটি গোখাদ্য যার বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। ভালভাবে পচন করা হলে সাইলেজের শর্করা খাবারকে পরিপাকযোগ্য এসিডে পরিণত করে, যা গরুর খাদ্যের পুষ্টিগুণ বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি সাইলেজে ব্যবহৃত সকল পুষ্টি উপাদান খাবারকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। প্রাকৃতিকভাবে চরে খাওয়া ঘাসের চেয়ে অনেক বেশি খাদ্য উপাদন পাওয়া যায়। এতে শক্তির অপচয় অনেক কম হবে। দুগ্ধবতী গাভীর শারীরিক এবং দুধ উৎপাদনের প্রয়োজনে প্রচুর পরিশাণে শক্তি, আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। ভাল মানসম্পন্ন সাইলেজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ শক্তি, প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার রয়েছে; যা গাভীর দুধ উৎপাদন অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক ও ভাল রাখে।
চারণ ভূমিতে চরানোর ফলে ঘাসের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায় অন্যদিকে সাইলেজ বানানোর ফলে জমিতে ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে। মাঠ থেকে বেশি মাত্রায় ঘাস সংগ্রহ করে সাইলেজ বানানো হলে ঘাস সংকটকালীন সময়ে গরুর চাহিদাপূরণ করা সম্ভব। শুকনো খড় বা ঘাস রাখার জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে সাইলেজ সংরক্ষণে অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়। সাইলেজে পরিপাকযোগ্য এনার্জির (শক্তি) পরিমাণ বেশি; প্রতি কেজিতে ৯-১২ মেগাজুল এনার্জি পাওয়া যায়।
সাইলেজের মধ্যে এনার্জি, আমিষ ও প্রয়োজনীয় ফ্যাট বিদ্যমান থাকায় গাভীর পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাইলেজ সঠিক মাত্রায় খাওয়ানো হলে প্রজনন প্রক্রিয়া ভাল থাকে। বর্ষা মৌসুমে সবুজ ঘাসে আদ্রতা বেশি থাকার কারণে শুকাতে সমস্যা হয়, আর শুকনো হলে পুষ্টিমান কমে যায়। তাই সারাবছর সঠিক পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ঘাস গরুকে খাওয়াতে সাইলেজ হতে পারে উত্তম প্রক্রিয়া। কাঁচা ঘাসের তুলনায় এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে রাখা ঘাসের গুণগত ও খাদ্যমান বেশি। দেশীয় ঘাস যেমন : দূর্বা, বাকসা, আরাইল, সেচি, দল ইত্যাদি এবং গাছের পাতা যেমন : ধৈঞ্চা, ইপিল-ইপিল উন্নত জাতের ঘাস যেমন: নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, ভুট্টা, সুদান, পারা, সরগম ইত্যাদি সাইলেজ তৈরি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সাইলেজ তৈরি
সাইলেজ তৈরি হয় একটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। প্রতিটি ধাপ সতর্ক থেকে সাইলেজ উৎপাদন করলে তার গুণগত মান অনেক ভাল হয় এবং বেশিদিন সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যায়। ভাল সাইলেজ তৈরির জন্য ফসল সঠিকভাবে নির্বাচন করা এবং সঠিক পর্যায়ে কাটা এবং মাড়াই করা প্রয়োজন। একটি পশুখাদ্য ফসল যাতে চিনি সঠিকভাবে পাওয়া যায় না, ভালো সাইলেজ তৈরি হবে না। ভালো সাইলেজ তৈরির জন্য ফসল ফুলের পর্যায়ে কাটা উচিত। সবুজ খাদ্যশস্য যেমন ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, ওট সাইলেজ তৈরির জন্য উপযুক্ত। এসব ফসলে চিনির পরিমান বেশি থাকায় প্রাকৃতিক গাঁজন ভালো হয়। সবুজ ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাইলেজ ভুট্টার কারণ এই সাইলেজে কাণ্ড, পাতা এবং ভুট্টা থাকে যা দানাদার খাদ্যের চাহিদাপূরণ করে। এ জন্য আধা কাঁচা ভুট্টা সংগ্রহ করা ভালো।
ধাপ-১ : ফুল আসার আগে একই পরিপক্বতার ঘাসগুলো কেটে নিতে হবে। সবুজ ঘাসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সাইলেজ হয় ভুট্টার। কারণ এই সাইলেজে কান্ড, পাতার সাথে ভুট্টাও থাকে; যার ফলে দানাদার খাদ্যের চাহিদাও পূরণ হয়। এজন্য আধা কাঁচা ভুট্টা থাকার সময় সংগ্রহ করা ভালো।
ধাপ-২ : ঘাসগুলোকে একদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে যেনো ভেজা ভাবটা না থাকে। নেপিয়ার ঘাস কাটার পর এতে শুষ্ক পদার্থ থাকে ১৫-২০%। একদিন রোদে শুকানো হলে তা ৩০% এর কাছাকাছি হয়। যা সাইলেজ তৈরির জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে গাছের পাতা কিংবা আগাছা ৪ ঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নিলেই ৩০% শুষ্ক পদার্থ থাকে। কাটিং আর্দ্র কিন্তু ভেজা না। হাতে নিয়ে চাপ দিলে আগের অবস্থানে যাবে না।
ধাপ-৩ : ঘাস ১-৩ ইঞ্চি পরিমান ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। বেশি পরিমাণে কাটার জন্য বাজারে মেশিন আছে যাকে চপার (Chopper) মেশিন বলে।
ধাপ-৪ : ফার্মেন্টেশন বা গাঁজন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করার জন্য চিনি (কার্বোহাইড্রেট) জতীয় উপাদান যুক্ত করতে হবে। এজন্য লালিগুড় বা মোলাসেস ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া লাল চিনিও ব্যবহার করা যায়। (বি.দ্র. ভুট্টা, জার্মান ঘাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে মোলাসেস প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না) প্রতি ১০০ কেজি ঘাসের জন্য ২-৩% বা ২-৩ কেজি মোলাসেস প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মোলাসেসের সাথে একই পরিমাণ পানি যুক্ত করতে হবে।
ধাপ-৫ : এবার সংরক্ষণের জন্য সাইলো বা পাত্র ঠিক করতে হবে। এজন্য স্টিক ব্যাগ বা বস্তা, ড্রাম ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া মাটিতে পুঁতেও সংরক্ষণ করা যায়।
স্টিক ব্যাগ, ড্রামে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যাগটি যেন কোনোরকম ছেঁড়া না হয়। প্রথমে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত দ্রবণের অর্ধেক পরিমাণ ঘাসে প্রয়োগ করতে হবে। তারপর সেই ঘাস ব্যাগে কয়েকধাপে ভরতে হবে। এক ধাপ ভরার পর ভালোভাবে চাপ দিতে হবে যেন ঘাসগুলোর মাঝে ফাঁকা না থাকে, ফাঁকা থাকলে সেখানে বাতাস থেকে যাবে, যার ফলে সাইলেজ ভালো না হওয়ার কারণে বেশিদিন ঠিক থাকবে না। তারপর মোলাসেস মিশ্রিত পানি আবার খানিকটা প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে কয়েকধাপে ব্যাগ কিংবা ড্রামে ভালোভাবে ভরে শক্তভাবে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে যেনো বাতাস প্রবেশ না করতে পারে।
মাটিতে পুঁতেও সাইলেজ করা যায় এজন্য উঁচু স্থান নির্বাচন করে প্রয়োজনীয় পরিমাণ গর্ত করে কয়েকধাপে সমপরিমাণে মোলাসেস এবং পানি মিশ্রিত ঘাস পা দিয়ে ভালোভাবে চাপ দিয়ে কম্প্যাক্ট করতে হবে। তারপর উপরে আবার পলিথিন দিয়ে শক্ত করে বেঁধে মাটি চাপা দিতে হবে।
ধাপ-৬ : উক্ত প্রক্রিয়াটি ১-২ দিনের মাঝে শেষ করতে হবে। সাইলেজ আরও পুষ্টিসমৃদ্ধ করার জন্য অব্যবহৃত কলা, কলার খোসা, মিষ্টি আলু, আখের খোসাও যুক্ত করা যায়। ভালোভাবে সাইলেজ তৈরি করলে সর্বোচ্চ ১০-১২ বছর সংরক্ষণ করা যায় এবং পুষ্টিগুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে ।
সবুজ ঘাস এর সাইলেজ বানানোর ক্ষেত্রে সবুজ ঘাসের শতকরা ৩-৪ ভাগ চিটাগুড় মেপে একটি চাড়িতে নিতে হবে। তারপর ঘন চিটাগুড়ের মধ্যে ১:১ অথবা ৪:৩ পরিমাণে পানি মিশালে ইহা ঘাসের উপর ছিটানো উপযোগী হবে। ঝরনা বা হাত দ্বারা ছিটিয়ে এ মিশ্রণ ঘাসে সমভাবে মিশাতে হবে।
সাইলোর তলায় পলিথিন দিলে আগে বিছিয়ে নিতে হবে। পলিথিন না দিলে পুরু করে খড় বিছাতে হবে। এরপর দু’পাশে পলিথিন না দিলে ঘাস সাজানোর সাথে সাথে খড়ের আস্তরণ দিতে হবে। স্তরে স্তরে সবুজ ঘাস এবং শুকনো খড় দিতে হবে। প্রতি পরতে ৩০০ কেজি সবুজ ঘাস এবং ১৫ কেজি শুকনো খড় দিতে হবে। ৩০০ কেজি ঘাসের পরতে পূর্বের হিসাবে ৯-১২ কেজি চিটাগুড় ও ৮-১০ কেজি পানির মিশ্রণ ঝরনা বা হাত দিয়ে সমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। খড়ের মধ্যে কোন চিটাগুড় দিতে হবে না। এভাবে পরতে পরতে ঘাস ও খড় সাজাতে হবে। যত এঁটে ঘাস সাজানো হবে তত সুন্দর সাইলেজ তৈরি হবে। সাইলো ভর্তি করে মাটির উপরে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত ঘাস সাজাতে হবে। ঘাস সাজানো শেষ হলে খড় দ্বারা পুরু করে মাটি দিতে হবে। সম্পূর্ণ ঘাস এক দিনেই সাজানো যায়। তবে বৃষ্টি না থাকলে প্র্রতিদিন কিছু কিছু করেও কয়েক দিনব্যাপী সাইলেজ তৈরি করা যায়। নিচু জায়গায় সাইলেজ করা যাবে না তাতে পানি জমে সাইলেজ নষ্ট হয়ে যোতে পারে।
সাইলেজ ব্যবহারের নিয়ম : সাইলেজ স্বাভাবিক ঘাসের মতই গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়। সাইলেজ সবুজ ঘাসের চাহিদাপূরণ করে । সব বয়সের গবাদিপশুকে সহজে খাওয়ানো যায়। অল্প করে অভ্যাস করিয়ে বেশি করে খাওয়ানো যায়। ভালভাবে প্রস্তুত সাইলেজ ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে পশুদের খাওয়ানোর উপযোগী হয়। প্রথমত, মাটি সাবধানে মুছে ফেলতে হবে এবং তারপর এক প্রান্ত থেকে পলিথিন শিটটি সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে সাইলেজ সাবধানে অপসারণ করতে হবে এবং পশুকে খাওয়াতে হবে যাতে নূন্যতম পরিমান সাইলেজ বাতাসের সংস্পর্শে আসে। অন্যথায় সাইলেজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সঠিকভাবে পরিচর্যার পাশাপাশি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ সাইলেজ খাওয়ানো হলে গরুর মাংশ উৎপাদন অনেকাংশ বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত টিকাদান , কৃমিমুক্ত রাখা এবং দানাদার খাবারের সাথে সাইলেজ খাওয়ানোর ফলে খুব চমৎকার ফলাফল পাওয়া যায়। গরুর ওজন অনুযায়ী ২-৩% হারে সাইলেজ দিনে ২-৩ বার খাওয়ানো যায়। সাইলেজের মধ্যে কোন রাসায়নিক বা ইউরিয়া না থাকায় এতে খাওয়ানো কোন সতর্কতা বা ঝুঁকিও নেই। সাইলেজের মধ্যে ঘাসের সকল উপাদান এবং দানাদার উপাদান সংমিশ্রণ থাকার ফলে পর্যাপ্ত এনার্জি, প্রোটিন, ফ্যাটসহ অন্যান্য উপকরণ থাকায় দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ প্রজনন ক্ষমতা ভাল রাখে। নিয়মিত সাইলেজ সঠিক নিয়মে খাওয়ালে গরু যথাসময়ে গরম না আসা, গর্ভধারন না হওয়া, বাচ্চা প্রসবে বিলম্ব হওয়া ইত্যাদি কোন সমস্যা থাকেনা। বাছুরকে অল্প অল্প করে সাইলেজ খাওয়ালে বাছুরের পরিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক হয় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এভাবে সংরক্ষিত ভুট্টা/ঘাস প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ কেজি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
সাইলেজ কেন খাওয়াবেন
১. গো-খাদ্য খরচ কমায় : সাইলেজ খাওয়ালে দানাদার গো-খাদ্য ৫০% ও ধানের খড় ৭০% কম লাগে। এতে করে প্রতিদিন প্রতিটি গাভী/ষাঁড় গরুতে খাদ্য প্রায় অর্ধেক কম লাগে, যা লাভজনক খামারের প্রধান মূলমন্ত্র।
২. দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করে : বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করায় সাইলেজ পুষ্টিমান, ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফ্যাট ৩-৪ গুণ সাধারণ ঘাস (নেপিয়ার, জাম্বু, সরগম, পারা), ধানের খড় অপেক্ষা বেশি থাকে। সাইলেজ সহজেই হজম হয় এবং বেশী পরিমাণ প্রোপাইয়নিক এসিড (Propionic acid, CH3CH2CO2H ) ও বিউটারিক এসিড (Butyric acid, CH3H2CH2CO2H) উৎপাদনে সহযোগিতা করায় গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, সাথে গাভীর দুধের ফ্যাট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে খামারি উচ্চ মূল্যের বেশী পরিমাণ দুধ পায়; যা খামারকে লাভজনক করে গড়ে তুলে। সহজে সাইলেজ হজম হওয়ায়, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান পরিপূর্ণ থাকায় গরু মোটাতাজাকরণ খামারে ষাঁড়ের শরীরে প্রতিদিন মাংস উৎপাদন পূর্বের তুলনায় প্রায় ২৫-৩০% বৃদ্ধি পায়; যা খামারকে লাভজনক করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : প্রাকৃতিক পরিপূর্ণ পুষ্টি, খনিজ উপাদন থাকায় নিয়মিত সাইলেজ খাওয়ানোর ফলে গবাদিপশুর দেহের পুষ্টি ঘাটতি দূর হয়। ফলে সাইলেজ গবাদিপশুকে পুষ্টি ঘাটতি রোগ থেকে রক্ষা করে ও আন্যান্য রোগ মুক্ত সুস্থ খামার লাভজনক ও স্থায়ী খামারের প্রধান শর্ত।
আদর্শ মানের সাইলেজের বৈশিষ্ট্য
১. ভাল গন্ধ, হালকা হলদে রং হবে।
২. ভুট্টা(Corn) সাইলেজে সঠিক পুষ্টি মানের প্রচুর ভুট্টা দানা থাকবে ২৫ থেকে ৩০%।
৩. পি. এইচ (অম্লীয় মাত্রা) : ৩.৭-৪.৭ ।
৪. সাইলেজ হাতে নিলে পানি হাতে লাগবে না। (আদর্শ আদ্রতা : ৫৮-৬৮%)।
৫. কাটিং সাইজ : ২-৩ সে.মি.।
৬. সহজে হজম হবে।
বাংলাদেশে সাইলেজের নতুন মার্কেট
সাইলেজের পুষ্টি এবং উপকারিতা জেনে খামারিরা নিজেরা সাইলেজ উৎপাদনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দেশের কিছু কিছু কোম্পানি আধুনিক নিয়মে সাইলেজ উৎপাদন করে খামারিদের প্রয়োজনে বণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং নতুন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তরা সাইলেজের বাণিজ্যিকীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সাইলেজ অন্য খাবারের তুলনায় অনেকটা সাশ্রয়ী বিশেষ করে শুকনো খড় খাওয়ানোর চেয়ে সাইলেজ খাওয়ানো অনেক ভাল এবং খামারিরা এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে সাইলেজ অনেক পুরনো একটি পদ্ধতি। কিন্তু পূর্বে সাইলেজের এমন উপকারিতা খামারিরা আয়ত্ত করতে পারেননি। বর্তমানে তথ্যপ্রবাহের অবাধ ব্যবহার এবং সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাইলেজের বাণিজ্যিক রূপ দাঁড়িয়েছে; যা দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এই প্রযুক্তির দ্বারা খামারিরা লাভবান হতে পারবেন। এই প্রযুক্তির সফলতা মানুষ পাবে। সঠিক নিয়মে উৎপাদিত প্রাণিসম্পদ পণ্য মানুষ খেয়ে হবেন ধন্য।