মৎস্য বিষয়ক আইনসমূহ

মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০

Jakia sultana | ১২ মে ২০২৪

মৎস্য  সম্পদের গুরুত্ব, এ সম্পদের বর্তমান ও ভবিষ্যত চাহিদা প্রাপ্যতা এবং যথাযথ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০ প্রণয়ন করিয়াছেন।  এ আইনের সংক্ষিপ্ত সার নিচে দেওয়া হইল:

মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মৎস্যখাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হইবেন।

লাইসেন্স ব্যতীত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত

এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন ব্যক্তি ধারা ৬ এর অধীন লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিপণন, বিক্রয়, বিতরণ এবং আনুষঙ্গিক কার্যাবলী সম্পাদন করিতে পারিবেন না।

লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ

এই আইনের অধীন মৎস্যখাদ্য সংক্রান্ত বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা পরিচালক কর্তৃক এতদ্বদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হিসাবে গণ্য হইবেন।

লাইসেন্স প্রদান

এই আইনের অধীন মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি, রপ্তানি, বিপণন, বিক্রয়, বিতরণ এবং আনুষঙ্গিক কার্যাবলী সম্পাদন করিতে ইচ্ছুক কোন ব্যক্তি লাইসেন্সের জন্য ধারা ৫ এ উল্লেখিত লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফরমে আবেদন করিতে পারিবেন।

লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন

এই আইনের অধীনের প্রদত্ত লাইসেন্সর মেয়াদ হইবে লাইসেন্স ইস্যুর তারিখ হইতে (এক) বৎসর।

লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি

এই আইনের অধীন প্রদেয় লাইসেন্সের ফি ও নবায়ন ফি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, এতদুদ্দেশ্যে বিধি প্রণীত না হওয়া পযন্ত সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের দ্বারা, লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি এর হার ধার্য করিতে পারিবে।

লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি

কোন লাইসেন্স গ্রহীতা এই আইন বা তদধীন প্রণীত বিধি বা লাইসেন্স এর কোন শর্ত ভঙ্গ করিলে লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স গ্রহীতাকে যুক্তিসংগত কারণ দর্শানোর সুযোগ প্রদান করিয়া প্রদত্ত লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে।

আদর্শমাত্রা

(১) সরকার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদিতব্য মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য এর গুণগত মান বজায় রাখিবার লক্ষ্যে বিধি দ্বারা মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের আদর্শমাত্রা নির্ধারণ করিবে এবং বণিজ্যিকভিত্তিতে মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য প্রস্ত্ততকালে উক্ত আদর্শমাত্রা অনুসরণ বাধ্যতামূলক হইবে।

(২) মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরীতেও পরীক্ষায় কোন মৎস্যখাদ্য বা পশুখাদ্যে উপধারা (১) এ উল্লিখিত আদর্শ  মাত্রা না পাওয়া গেলে বা পুষ্টি বিরোধী কোনো উপাদানের উপস্থিতি প্রমাণিত হইলে বা উহাতে মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যে অযোগ্য বা ক্ষতিকর কোনো দ্রব্যের মিশ্রণ পাওয়া গেলে উক্ত মৎস্যখাদ্য বা পশুখাদ্য প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা যাইবে।

মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যের মান নিশ্চিতকরণ

(১) আমদানিকৃত ও দেশে উৎপাদিত যে কোন মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য বাজারজাত করিবার যে কোন পর্যায়ে উহার মান যাচাইয়ের উদেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন উৎপাদক, আমদানিকারক বা বিক্রেতার নিকট হইতে নমুনা সংগ্রহ করিয়া উহা মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করাইতে পারিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরীক্ষায় মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য ব্যবহারের অনুপযোগী প্রমাণিত হইলে উক্ত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য বাজেয়াপ্ত করা হইবে এবং উহার আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী এই আইনের অপরাধ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

ক্ষতিকর ও ভেজাল মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন, আমদানি রপ্তানি, বিক্রয়, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ

কোনো ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অথবা উহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীর মাধ্যমে এইরুপ কোনো মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রয় বিতরণ বা পরিবহন করিতে পারিবে না:

(ক) যাহাতে মানুষ, পশু মৎস্য বা পরিবেশের জন্য কোনো বিষাক্ত বা ক্ষতিকর পদার্থ থাকে; এবং

(খ) যাহা আদর্শমাত্রার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ

পাত্র ও লেভেলিং

কোন মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য বাজারজাত করা যাইবে না, যদি-

(ক) উক্ত খাদ্য অনুমোদিত পাত্র বা প্যাকেটে সংরক্ষিত এবং বায়ূনিরোধ অবস্থায় মোড়কজাত না হয়; এবং

(খ) উক্ত পাত্র বা প্যাকেটে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলি উল্লেখ না থাকে, যথা:-

(১) প্রস্ত্ততকারকের নাম ও যে দেশে প্রস্ত্তত সেই দেশের নাম:

(২) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও নিবন্ধন নম্বর;

(৩) মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যের প্রকৃত ওজন;

(৪) বিদ্যমান বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের ও পুষ্টি উপাদুনের নাম এবং শতকরা হার;

(৫) মৎস্যখাদ্য ও পশখাদ্য চিহ্নিত করার জন্য প্রদেয় লট নম্বর বা অন্যবিধ উপায়;

(৬) উৎপাদিত পণ্যের উৎস্য শনাক্তকরণ কোড;

(৭) কোন জাতীয় মৎস্য বা পশুখাদ্য তাহার উল্লেখ;

(৮) উৎপাদনের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ।

মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক, গ্রোথ হরমোন কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ

(১) মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য এন্টিবায়োটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড ও কীটনাশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাইবে না।

(২) কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গন্য হইবে।

কারখানা বা সংশ্লিষ্ট স্থানে প্রবেশের ক্ষমতা

মহাপরিচালক বা তাঁহার নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইন ও বিধি সাপেক্ষে, যুক্তিসঙ্গত সময়ে কোনো মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য কারখানা ও উহার প্রাঙ্গণ, প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, প্রক্রিয়াকরণের উদ্দেশ্যে উক্ত কারখানায় আনীত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য যে কোনো উপাদান ও উপাদানসমূহ মজুদ করিবার স্থান, পরিবহনকারী যে কোনো যান, বিক্রয় কেন্দ্র বা এতদসংশ্লিষ্ট অন্য কোনো স্থান বা যানবাহন এবং মান নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যে কোনো দলিল পরিদর্শন করিতে পারিবেন।

ক্ষতিকর ও ভেজাল মৎস্যখাদ্য ও মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য বাজেয়াপ্তকরণ বিনষ্টকরণ ইত্যাদি

(১) কোনো মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য ক্ষতিকর ও ভেজাল প্রমাণিত হইলে মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য এবং উহাদের উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত পন্য ও যন্ত্রপাতির সমূদয় বা কোনো অংশ বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।

(২) বাজেয়াপ্ত অস্বাস্থ্যকর বা পঁচা বা দূষিত বা ভেজাল মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য পহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিনষ্ট করিবার জন্য নিদের্শ প্রদান করিতে পারিবেন।

(৩) উপ-ধারা (১) এ বাজেয়অপ্তকৃত মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা তাঁহার মনোনীত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না এইরুপ স্বাস্থ্যসম্মত পন্থায় বিনষ্ট করিবেন এবং উক্তরুপ বিনষ্টকরণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র কারখানা কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিতে হইবে।

কোম্পানী কর্তৃক অপরাধ সংঘটন

কোন কোম্পনী কর্তৃক এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংগঠিত হইলে উক্ত আপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে কোম্পানীর এইরুপ প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী উক্ত অপরাধ সংঘঠন করিয়াছেন বলিয়া গন্য হইবে, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ সংঘটন তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে অথবা উক্ত অপরাধ রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।

অপরাধ বিচারার্থ গ্রহণ ও বিচার

(১) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতীত কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো মামলা বিচারার্থ গ্রহণ করিবে না।

(২) ফৌজদারী কর্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেনো, এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে।

(৩) এই আইনে ভিন্নতর কিছু না থাকিলে, এই আইনের অধীন অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে ফৌজদারী কাযবিধির Chapter XXII তে বর্ণিত পদ্ধতি যতদূর সম্ভব প্রযোজ্য হইবে।

অপরাধের আমনযোগ্যতা ও জামিনযোগ্যতা

এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ অ-আমলযোগ্য (non-cogniziable) ও জামিন যোগ্য (bailable) হইবে।

দন্ড

যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনুরুপ অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পযন্ত অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।

বিধি প্রণয়ণের ক্ষমতা

সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে।

নিরাপদ মাছে ভরবো দেশে,

বদলে দেব বাংলাদেশ।