মাছ চাষ

একুরিয়ামে মাছ পালন পদ্ধতি

MD.AL.MAMUN | ১৬ মে ২০২৪

একুরিয়ামে মাছ পালন পদ্ধতি

মানুষ মূলত : খুবই সৌখিন । তার মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হবার পর সে তার জীবন আর পরিবেশ সাজাতে চায় সুন্দর কিছু দিয়ে যেটা তার ও তার আশেপাশের মানুষের নজর কাড়ে । আর এক্ষেত্রে দেখা যায় একেক মানুষের একেক রকম শখের। কিন্তু এই সৌখিনতার পাশাপাশি চলে আসে সে জিনিসটার প্রতি যন্তশীলতা এবং তার রক্ষনাবেক্ষন, যার জন্য মানুষকে অনেক সময় দিতে হয় সেটার পিছনে । যেমন :- বাগান, শো-পিস,কলম,বই, ডায়েরী, দেয়াল ছবি, গাড়ী বা অনেক কিছুই হতে পারে । ঠিক তেমনি একটি সখের জিনিস হলো, একুরিয়াম । অনেকে বাসায় মুরগি,কুকুর , বিড়াল বা মাছ পালতে ভালোবাসেন । আমাদের শহর কেন্দ্রিক জীবনধারায় ড্রইং রুমে একটি একুরিয়াম সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তোলে নিঃসন্দেহে । ঘরের কোণের একুরিয়ামে জীবন্ত বাহারী রং এর মাছগুলো যখন  সাঁতার কাটে তখন দেখতে ভালই লাগে। কিন্তু একটা সুন্দর, চকচকে,মাছের জন্য সু-স্বাস্থ্যকর একুরিয়াম মেইন্টেন করতে হলে সেটার পিছনে অনেক শ্রম দিতে হবে এবং হতে হবে ধৈর্য্যশীল। বড় একটা অংশ একসময় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ।তখন সেই ভাঙ্গা একুরিয়ামের জায়গা হয় বাড়ীর স্টোররুমে বা গ্যারেজের কোণায়। তবে দীর্ঘদিন ধরে আগ্রহ ও ধৈর্য্য বজায় রাখাটাও অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। কারণ বেশীরভাগ মানুষ একুরিয়ামের ব্যাপারে সঠিক তথ্য পায়না। অনেকটা বেসিক সেন্সের উপর ভিত্তি করে মাছ পালেন একুরিয়ামে।

কেমন একুরিয়াম কিনবেন 

আপনারা যখন একুরিয়াম কেনার সিন্ধান্ত নিবেন তখন প্রথমেই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার ঘরের মাপ কারণ বেশী বড় বা বেশী ছোট একুরিয়াম আপনার ঘরে বেমানান লাগতে পারে । ধরে নিলাম একটি সাধারণ ঘরের মাপ হতে পারে ১০ ফুট বাই ১৫ ফুট। আর তাই এই ধরনের রুমে ২ ফুট বাই ১ ফুট বা ২.৫ ফুট বাই ১.৫ ফুট একুরিয়ামই আদর্শ। কাঁচের পুরুত্ব এখানে একটা ব্যাপার । তবে বড় একুরিয়ামের ক্ষেত্রে পুরু কাঁচ নেয়াটাই ভালো। একুরিয়ামের ষ্ট্যান্ডসহ একটা (উল্লেখিত সাইজের) একুরিয়ামের জন্য লাগবে পাথর কুঁচি , ফিল্টার, এয়ার মোটর, রাবারের ফ্লেক্সিবল পাইপ, এয়ার এক্সিকিউটর। সাধারণ সাইজের একুরিয়ামের জন্য প্রায় দশ কেজি পাথর কুঁচির (প্রতি কেজি ১৫-২০ টাকা) প্রয়োজন । এয়ার মোটরের দাম (সাধারণ মানের) প্রায় ২৫০-৬৫০ টাকা, ফ্লেক্সিবল পাইপ ১০ টাকা গজ, এয়ার এক্সিকিউটর ১০০-২৫০ টাকা, ফিল্টার ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এটাই একটি একুরিয়ামের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান । এর পরে যেকেউ পছন্দের বিভিন্ন ডেকোরেশন আইটেম দিয়ে তার একুরিয়াম সাজাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে একুরিয়ামের সাইজ একটা ব্যাপার সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি আপনার একুরিয়ামে আলো জ্বালাতে পারেন।

সেক্ষেত্রে আপনি এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন। আরেকটু ভালো হয় হ্যালোজেন বাল্ব পাওয়া যায় যেটা দেখতে একেবারে চিকন এবং আলোটাও কিছুটা বেগুনী । যেটা একুরিয়ামের দোকানে ব্যবহার করা হয় । যার জন্য মাছের কালারগুলো খু্ব সুন্দর লাগে বাহির থেকে। আরেকটি জিনিস বেশ প্রয়োজন যেটা আমরা বেশীরভাগই অবহেলা করে যাই । তা হলো একটি ইলেকট্টিক ওয়াটার হিটার । এটা পানিকে মাঝে মাঝে হালকা উষ্ণ রাখে। কারণ মাছ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে বেশী গরম ও ঠান্ডা পানিতে । যদিও পানি বেশী গরম হওয়ার সম্ভাবনা নাই তবে ঠান্ডা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, বৃষ্টির দিনে বা শীতের দিনে । এক্ষেত্রে একটা ওয়াটার হিটার ১০০-৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। ৫০০ টাকায় পানেব অটো  ওয়াটার হিটার । একুরিয়ামে পাথর কুঁচির নিচে একটি ওয়েট ডাষ্ট ফিল্টার রাখতে হয় । তার সাথে একটি এয়ার এক্সিকিউটর থাকে যেটা দিয়ে বাতাস বের হবার সময় ভিতরে কিছুটা উর্দ্ধ চাপের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ময়লাগুলো খুব ধীরে ধীরে পাথরের ভিতর দিয়ে ঐ ফিল্টারের নিচে গিয়ে জমা হয় । সেক্ষেত্রে একুরিয়ামে সব সময়ের জন্য এই যন্ত্রটি চালিয়ে রাখতে হবে।

একুরিয়ামের মাছ 

আমাদের দেশে একুরিয়ামে রাখার মত অনেক মাছ পাওয়া যায়। যেমন:- গোল্ডফিশ, এঞ্জেল, শার্ক, টাইগার ব্যর্ব, ক্যাট ফিশ, ঘোষ্ট ফিশ , মলি, গাপ্পি, ফাইটার (বেট্টা),সাকারসহ আরো অনেক রকম মাছ । তবে এখানে উল্লেখিত মাছগুলোর মধ্যে গোল্ডফিশই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। তাই আমরা আলোচনায় বেশীরভাগ গোল্ডফিশ নিয়েই আলোচনা করবো। তাই আমাদের পালন করা বেশীরভাগ মাছই গোল্ডফিশ প্রজাতির। যেমন:- কমেট, ওয়াকিন, জাইকন, সুবানকিন,ওরান্ডা, ব্ল্যাকমোর , ফেন্টেইল রিউকিন , ভিয়ের টেইল,রানচু ইত্যাদি। কিন্তু দেহের কাঠামো হিসেবে গোল্ডফিশ দুইরকম। ডিম্বাকৃতি ও লম্বা দৈহিক গঠন হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার দিক দিয়ে লম্বা দৈহিক কাঠামোর গোল্ডফিশগুলো শক্ত হয়ে থাকে। গোল্ডফিশ শীতল ( সাধারণ তাপমাত্রার) পানির মাছ। তবে এরা হালকা গরম পানিতেও থাকতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার ফলে এরা মারাত্বক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এটা বেশীও হতে দেখা গেছে । গোল্ডফিশ খুবই শান্ত প্রকৃতির একটা মাছ । তবে একুরিয়ামে কোন নতুন মাছ আসলে কখনও কখনও কোন কোন গোল্ডফিশকে একটু উশৃঙ্খল হতে দেখা যায় । তবে এটা খুবই কম হয়। আর যদি এমন দেখা যায় তবে ৩৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে এ সমস্যা দুর হয়ে যায়। কেউ কেউ একুরিয়ামে ছোট শৈবাল বা জলজ উদ্ভিদও রাখেন। এটা আসলে ডেকোরেশনের চেয়ে অন্য জায়গায় তাৎপর্য আছে বেশী। এটা এক ধরনের নাইট্রোজেন সাইকেলের কাজ করে । মাছের বর্জ্য থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনাস যৌগ নির্গত হয়। কার্বণ-ডাই-অক্সাইড সাধারণত বুদবুদ হিসেবে বের হয়ে যায় আর বাকীটুকু একুরিয়ামের শৈবাল দ্বারা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। নাইট্রোজেনাস যৌগ প্রথমে এমোনিয়া,এমোনিয়া থেকে নাইট্রেটে পরিনত হয়। নাইট্রেট শৈবাল দ্বারা শোষিত হয়।

মাছের রোগ ও তার চিকিৎসা 

প্রথমেই মনে রাখতে 

প্রথমেই মনে রাখতে হবে আপনি আপনার মাছের যেকোন রোগের চিকিৎসার ব্যপারে দোকানদারের কাছ থেকে কোন রকম হেল্প পাবেন না। আর পেলেও তথ্য ভূল পাবেন। যদি আপনাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্লাষ্টিকের বোতলে থাকা তিনটি ঔষধ নয়। ওগুলো একুরিয়াম মেইন্টেন করার জন্য কিছুদিন পর পর প্রয়োগ করতে হয়। অর্থাৎ একুরিয়ামের পরিবেশ ভালো রাখার জন্য দিতে হয়। কিন্তু রোগ ও তার চিকিৎসা ভিন্ন জিনিস। আমাদের দেশের আবহাওয়ার যে কয়েকটি রোগ হতে পারে মাছে শুধু সেগুলোই আলোচনা করবো:

লেজ পচা

মানুষের ক্ষেত্রে ‘‘জন্ডিস ইজ নাথিং বাট এ সিম্পটম অব এ ডিজিস’’ । মানে জন্ডিস কোন অসুখ না কিন্তু একটা অসুখের পূর্বভাস বটে। ঠিক তেমনি, লেজ পচা কোন নির্দিষ্ট অসুখ না তবে কোন শক্ত অসুখের পূর্ব লক্ষণ । তবে এই রোগের চিকিসাৎ আছে । এ রোগে মাছের লেজে বা পাখনায় একটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

এটি একটি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। তবে এটা কখনও কখনও ফাংগাল ইনফেকশনের জন্যও হতে পারে। তবে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হলে সেটার প্রকোপ অনেক বেশী হয়। এর ফলে লেজ আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। শেষে এমন আকার ধারণ করে যেটা দেখতে অনেকটা তুলার শেষ অংশের মত মনে হয়। এ রোগ ধীরে ধীরে দেহেও আক্রমন করে । তবে এটা যদি লেজের গোড়াকে আক্রমন করার আগেই কিউর করে ফেলা হয় হবে ক্ষতিগ্রস্থ লেজের  টিস্যু গুলোর কাছ থেকে আবার টিস্যু  গজানো শুরু করে কোন কোন ক্ষেত্রে।

চিকিৎসা

যদি দেখা যায় একুরিয়ামের কোন মাছ এই রোগে অল্প একটু কেবল আক্রান্ত হলো তখন সেটাকে তুলে অন্য জারে নিয়ে চিকিৎসা দেয়াই ভালো । আর যদি এমন হয় যে বেশীর ভাগ মাছই একই অবস্থা, তবে সাথে সাথে পানি পরিবর্তন করে সেগুলো চিকিৎসা দিতে হবে । তবে নিয়মিত একুরিয়াম সল্ট দেয়া হেরফের হলে এমন রোগ হতে পারে বা অন্যকোন কারণেও হতে পারে। এমন দেখলে এন্টিবায়োটিক ঔষধ দিতে হবে । এক্ষেত্রে ভালো কাজ করে টেট্রাসাইক্লিন । তবে যদিও টেট্রাসাইক্লিনটা একটু কড়া  মাত্রার ঔষধ তাই কম ইনজুরি হলে ডক্সি-সাইক্লিন ও ক্ষেত্র বিশেষে অক্সি-সাইক্লিন গ্রুপের যেকোন  ঔষধ দিলেও চলে । একটি ক্যাপসুল খুলে তার পাওডারটি পানিতে ফেলে দিতে হবে। এভাবে প্রায় ছয়/সাত দিন  রেখে আবার পানি পরিবর্তন করতে হবে। এ ঔষধ ব্যবহারের ফলে পানি হলুদ বা হালকা লাল হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নাই । আর পানির উপরে একটা ফেনা জমবে যেটা মাঝে মাঝে একটা চামচ দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়া ভালো।

হোয়াইট স্পট বা আইচ

কখনও কখনও মাছের গায়ে একরকম সাদা দাগ দেখা যায় সেটাকে আইচ বলে। মূলতঃ এটা একটা প্যারাসাইট (পরজীবি) । এটি একটি মারাত্বক রোগ । আক্রান্ত মাছের সারা গায়ে খুব তাড়াতাড়ি এটা বিস্তার করে এবং গায়ে লেগে থাকে। ধীরে ধীরে মাছ নিস্তেজ হয়ে পড়ে । এ রোগে মাছের মৃত্যু হতে পারে। এই পরজীবিগুলোর জীবনচক্র প্রায় দশদিনের মত।

চিকিৎসা 

ফরমালিন,ক্লোরাইড লবন এবং মেলাকাইট গ্রিন এই রোগের উপশমের জন্য ব্যবহার করতে হয়। আক্রান্ত মাছকে তুলে ক্লোরাইড সল্ট ও ফরমালিন মেশানো পানিতে কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখতে হয়। দিনে দুই একবার করলে এর ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু এ রোগের চিকিৎসা সাধারণত তিনদিন করলেই এর ফলাফল পাওয়া যায়। তবে  একেবারে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়াই ভালো।

একর 

এটা কমন রোগ মাছের । অনেক সময় দেখা যায়,মাছের দেহের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ লেজ শুরু হওয়ার আগের অংশে অথবা পেটের নিচে পাখনার কাছে একটা লাল ফুসকুরির মত দেখা যায় (অনেকটা ব্রনের মত)। এ রোগটাকে এংকর বলে। এ লাল ফুসকুরিটি আস্তে আস্তে বড় হয়।

কিছুদিন পরে এখান থেকে একটা ছোট সুতার মত বের হয়। সেটা দেখতে অনেকটা গাছের শিকড়ের মত।

চিকিৎসা 

এ রোগের চিকিৎসাও লেজ পচা রোগের মত (যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে)। এন্টিবায়োটিক এপ্লাই করতে হয়। অর্থাৎ টেট্রাসাইক্লিন । ঔষধ ব্যবহারের কিছুদিনের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যায় । তখন ঐ ছোট শিকড়ের মত অংশটি পড়ে যায়।

পেট ফুলা রোগ

এ রোগ হলে মাছের পেট ফুলে যায়। মাছ আর কোন খাবার খেতে চায় না। মাছের মল ত্যাগে কষ্ট হয়। কষা হয়ে যায়।  

চিকিৎসা 

আসলে এ রোগের চিকিৎসা হলো মাছের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা । আমরা সবাই বাজার থেকে প্যাকেট খাবার কিনে খাওয়াই । সেখানে লাল ও সবুজ রং এর দানা থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর পর এগুলো পরিবর্তন করা ভালো। একুরিয়ামের দোকানে জীবন্ত ওয়ার্ম পাওয়া যায় সেটা এনে মাঝে মাঝে খাওয়াতে পারেন এবং মৃত ওয়ার্ম প্রসেস করা অবস্থায় কৌটাতে পাওয়া যায়। সেটাও মাঝে মাঝে দেয়া যেতে পারে। যদিও এগুলোর দাম একটু বেশী। বাজারে এক রকম গোলাপী রং এর লিকুইড পাওয়া যায় যেগুলো মাছের ভিটামিন নামে পরিচিত । দুই/তিন ফোঁটা দিয়ে খাবারটা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর খেতে দিলে ভালো হয়। এগুলিই সাধারণত আমাদের আবহাওয়ায় মাছের রোগ হয়ে থাকে। মূলতঃ সুস্থ্য মাছের জন্য একটি সুস্থ্য একুরিয়াম প্রয়োজন । তার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন করা । পানি কিছুদিন পর পর বদল করা । নতুন পানিতে পরিমাণ মত একুরিয়াম সল্ট দিতে হবে। আপনি ট্যাপের পানিই দিতে পারেন । আর যেসব স্থানে পানিতে আয়রন বেশী সেসব জায়গায় পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে থিতিয়ে দিতে পারেন।

একুরিয়ামের পরিচর্যা 

যে কারণে আমরা একুরিয়াম রাখতে চাইনা

১.পরিষ্কার করা ঝামেলা।

২.কিছুদিন পর পর মাছের রোগ ও মাছের মৃত্যু।

পানি পরিষ্কার করতে আপনাকে সাহায্য করবে

১. আপনার ট্যাপ থেকে একুরিয়াম পর্যন্ত একটি রাবারের পাইপ।

২.একুরিয়ামের পানি বের করার জন্য প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা রাবারের পাইপ।

পানি পরিবর্তন 

পানি পরিবর্তনের আগে নেট ব্যবহার (মাছ ধরতে হাত ব্যবহার না করাই ভালো) করে মাছকে একুরিয়াম থেকে তুলে নিয়ে আরেকটি পানি দেয়া জারে রাখবেন । তারপর পাঁচ ফুট লম্বা একটি রাবারের পাইপ (হার্ডওয়্যারের দোকানে ওয়াটার লেভেল নামে পাওয়া যায়) একুরিয়ামের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে অপর প্রান্তে আপনার মুখ লাগিয়ে অল্প একটু বাতাস টেনে ছেড়ে দিন নিচে রাখা বালতির ভিতরে । এক সময়ে পানি সব বালতিতে পড়ে গেলে কাছাকাছি কোন ট্যাপ থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি একুরিয়ামে দিন । এভাবে পানি পরিবর্তন সবচেয়ে সহজ।

যেখানে পাওয়া যাবে 

বর্তমানে বাজারে একুরিয়ামে মাছ পুষতে যা যা দরকার তার সবই পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে একুরিয়াম বক্স, মাছ , খাবার, ওষুধ প্রভৃতি । ঢাকার কাঁটাবন, নিউমার্কেট,বনানী,উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু একুরিয়াম-সামগ্রীর  দোকান আছে। একুরিয়ামের যে মাছ এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়,একটা সময় তার প্রায় সবই থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া,চায়না,ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু এখন প্রায় ৯০ শতাংশ মাছই এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন একুরিয়ামের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তাই কেবল শখ কিংবা সৌন্দর্যবর্ধন নয়, চাইলে একুরিয়াম মাছের চাষ ও ব্যবসা করে যেমন স্বাবলম্বী হওয়া যাবে,তেমনি বিদেশে রঙিন মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা যাবে।

একুরিয়ামে পোষার জন্য বাজারে যেসব মাছ পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে সিলভার শার্ক,এলবিনো শার্ক, টাইগার শার্ক, রেইনবো শার্ক, টাইগার বার্ব,রোজি বার্ব, গোল্ড ফিশ,অ্যাঞ্জেল ফিশ, ক্যাট ফিশ, সাকিং ক্যাট, কমেট,মলি, ফলি,গাপ্পি, বু-গোরামি,সিলভার ডলার, অস্কার,বু-আকার, টেলিচো, কৈ কার্প, টাইগার কৈ কার্প, ব্ল্যাক মুর, সোর্ডটেল,পাটি, এরোনা, ফ্লাওয়ার হর্ন,হাইফিন নোজ,ব্ল্যাক গোস্ট, সিসকাসসহ বিভিন্ন প্রজাতি। এসব মাছ প্রতিজোড়া ৫০ থেকে ৭০০ টাকায় কেনা যাবে। আবার কিছু মাছের দাম বেশিও হয়। তবে দাম অনেকটা নির্ভর করে ছোট-বড় ও প্রজাতির ওপর । মাছের খাবার সাধারণত দুই ধরনের হয়। শুকনো খাবার ও পোকামাকড় । প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারের দাম ২৫ থেকে ৫০ টাকা। একুরিয়ামে মাছের অসুখ-বিসুখ হলে তার ওষুধও বাজার থেকে কেনা যাবে।

একুরিয়াম বক্স নিজের পছন্দমতো বানিয়েও নেওয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে ছোট-বড় বিভিন্ন মাপের একুরিয়াম বক্স কিনতে পাওয়া যায়। দুই থেকে সাড়ে তিন ফুট আকারের একুরিয়াম বক্সের দাম এক হাজার ২০০ থেকে চার হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ছোট কাচের পাত্রেও রঙিন মাছ পোষা যায়। এসব পাত্রের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা। একুরিয়ামে মাছ রাখতে হলে এয়ার পাম্প , ছোট নেট, পাথরের টুকরাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম লাগে। একুরিয়ামে মাছ পুষতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমন-মাছের খাবার নিয়মিত দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন একুরিয়ামের পানি পাল্টাতে হবে।