বাছুর পালন

বাছুর পালন ও ব্যবস্থাপনা

Md.Samsul Alam | ০৯ মে ২০২৪

বাছুর পালন

বাছুর লালন পালনের গুরুত্ব

বাছুর উন্নয়নকে সাধারনত পালের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসারে বিবেচনা করা হয়। কারণ আজকের বাছুর আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। বাছুর লালন-পালন যদি যথাযথভাবে না করা হয় তবে ভবিষ্যৎ উৎপাদন হ্রাস পাবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গাভীর উৎপাদন ক্ষমতা বজায় থাকে। পর্যায়ক্রমে উন্নত জাত এবং উৎপাদনশীল গাভী দ্বারা কম উৎপাদনশীল গাভীকে অপসারণের মাধ্যমেই উচ্চ উৎপাদনশীল পাল গঠন করা সম্ভব। তাই বাছুর লালন-পালন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।

বাছুরের গর্ভকালীন যত্ন

বাছুরের গর্ভকালীন যত্ন বলতে প্রধানত মায়ের যত্নই বুঝায়। এক্ষেত্রে গর্ভবতী গাভীকে অন্তত গর্ভের শেষ তিনমাস পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে। দুধ দোহানো হলে ধীরে ধীরে শেষ তিন মাসে শুকিয়ে ফেলতে হবে। গাভীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পরিছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। অন্য গরুর সাথে যেন মারামারি না করে তা খেয়াল রাখতে হবে। প্রসব নিকটবর্তী হলে মেটারনিটি পেন বা আলাদা স্থানে রাখতে হবে।

জন্মের প্রাক্কালে যত্ন

অবশ্যেই আলাদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনো জায়গাতে রাখতে হবে। অপরিষ্কার স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাতে বাছুর প্রসব করলে বাছুরের বিভিন্ন প্রকার রোগ দেখা দিতে পারে। স্বাভাবিক প্রসবের লক্ষণ ব্যতীত অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে প্রানী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা কর্তব্য। এ সময় শুকনো খড় বিছিয়ে দিয়ে পাশে পর্যাপ্ত খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

জন্মের পর বাছুরের যত্ন

জন্মের পর পরই বাছুরকে শুকনো খড়কুটো বা ছালার উপর রাখতে হবে। বাছুরের নাক ও মুখমন্ডল হতে লালা বা ঝিল্লি (mucous) পরিষ্কার করতে হবে। নতুবা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি বাছুরের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তবে বুকের পাঁজরের হাড়ে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর কয়েক বার চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বাছুরের নাকে, মুখে, নাভীতে ফু দিলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রয়োজনে শ্বাস-প্রশ্বাস বর্ধনকারী ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। জন্মের সাথে সাথে বাছুরের নাভীতে কিছু এন্টিসেপটিক যেমন টিংচার আয়োডিন, ডেটল বা সেভলন লাগাতে হবে। ফলে ধনুষ্টংকার, নাভী ফুলা ইত্যাদি হবার সম্ভাবনা থাকে না। গাভী যেন তার বাছুরকে চাটতে (লেহন) পারে সে সুযোগ দিতে হবে অথবা শুকনো খড় বা ছেঁড়া কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। এ অবস্থায় বাছুরকে পানি দিয়ে ধৌত করা সমীচীন হবে না। কারণ পানির সংস্পর্শে আসলে বাছুরের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বাছুর উঠে দাঁড়ালে শালদুধ খাওয়াতে হবে।

বাছুরের বাসস্থান

বাছুরের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান বাছুরকে রোগমুক্ত রাখার প্রধান সহায়ক। বাছুরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য তাদেরকে পৃথক পৃকোষ্ঠে রাখতে হবে এবং এর ফলে প্রতিটি বাছুরের রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর হয়। অনেক বাছুর একসাথে রাখলে দুর্বল বাছুরগুলো সবল বাছুরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রয়োজনমাফিক খাবার খেতে পারে না এবং আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। বাছুরের ঘর ঢালু এবং শুকনো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। বাসস্থানে আলো বাতাস সরাসরি প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা উচিত। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম ও শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা দ্বারা বাছুরগুলো যাতে ক্ষতিগ্রহ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের মেঝেতে শুকনো  খড় বা ছালার চট বিছিয়ে দিতে হবে। প্রতিটি বাছুরের জন্য ৬ ইঞ্চি × ৪ ইঞ্চি মাপের ঘরের প্রয়োজন। গ্রামীণ পর্যায়ে বাঁশ ও কাঠের সাহায্যে অতি সহজেই ঘর নির্মাণ করা সম্ভব। ঘরে খাদ্য ও পরিষ্কার পানি সরবরাহ করার জন্য পাত্র রাখতে হবে।

বাছুরের অন্যান্য যত্ন

বাছুরের প্রতি সর্বদাই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সময়মত খাদ্য ও পানি সরবরাহের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধক টিকা দিতে হবে। বৃহৎ খামারে প্রতিটি বাছুরকে আলাদা করে চেনার জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাগ নম্বর দিতে হবে। বাছুর বড় হওয়ার সাথে সাথে শিং কেটে ফেলাই উত্তম। না হলে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বাছুরের খাদ্য: বয়স ভেদে বাছুরের খাদ্য তিন ধরনের হতে পারে।

জন্মের পর থেকে সাত দিন: এ সময় বাছুর প্রয়োজনমত কলেঅস্ট্রাম, কাঁচিদুধ বা শালদুধ খাবে। অন্য কোনো খাবার না দিলেও চলবে।

এক সপ্তাহ বয়স হতে দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত (৫-৬ মাস বয়স)

এ সময় বাছুরকে দুধের সাথে কাফ স্টার্টার দেয়া উচিত। দুধ খেলে ভিটামিন না দিলেও চলবে। কাফ স্টার্টার না দিলে বাচুরকে পরিমাণমত উন্নতমানের আঁশ জাতীয় খাবার সরবরাহ করতে হবে। কাফ স্টার্টারে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদনসমূহ থাকতে হবে।

সারণি ১:: কাফ স্টার্টারের পুষ্টি উপাদান

পুষ্টি উপাদান

পরিমাণ (%)

আমিষ

১৬-১৮

আঁশ জাতীয় খাবার

৭-১০

ক্যালসিয়াম

০.৬-গ.৭

ফসফরাস

০.৪-০.৫

ম্যাগনেসিয়াম

০.১৫-০.২০

সোডিয়াম

০০.৭-০,০৮

 

দুধ ছাড়ানোর পরবর্তীকাল

ট্রানজিশন পিরিয়ড বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন সময়ের মাঝামাঝি হতে বাছুরকে ক্রমে আঁশ জাতীয় খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হতে রপ্ত করতে হবে যাতে দুধ ছাড়ানোর পর বাছুর পুরোপুরি আঁশ জাতীয় খাদ্য নির্ভর হতে পারে। এ সময় আঁশ জাতীয় খাদ্যের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ দানাদার খাদ্যের মিশ্রণও সরবরাহ করতে হবে। বাছুরের এ সময়ের রসদ বাড়ন্ত গরুর অনুরুপ হবে।

বাছুরকে খাওয়ানোর পদ্ধতি

বাছুর জন্মের পরপরই বাছুরের ব্যবস্থাপনা এবং খাবার প্রণালী নিম্মরুপ হবে:

১. গাভীর গর্ভধারণের ২৭৮-২৯০ দিন (গড়ে ২৮৩) দিনের মধ্যে বাছুরের জন্ম আশা করা যায়।

২. বাছুরের জন্মের পরপরই ফিটাল মেমব্রেন ও শ্লেষ্মা নাক, মুখ থেকে সরিয়ে নেয়া উচিত

৩. জন্মের পরপরই বাছুরকে মায়ের শালদুধ (কলোস্ট্রাম) খাওয়াতে হবে।

শালদুধ খাওয়ানো নিয়ম হলো, দৈনিক প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ কেজি অর্থাৎ ২০-২৫ কেজি ওজনের বাছুরের জন্য দৈনি ১.২-১.৫ কেজি শালদুধ খাওয়াতে হবে। অবশ্যই আধ ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে এই দুধ খাওয়ানো শুরু করা উচিত। এই দুধ খাওয়ালে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাছুরকে প্রথম দিন উপরোক্ত নিয়মে খাওয়ানোর পর পরবর্তী প্রায় তিন মাস পযন্ত নিম্মের ছকে বর্ণিত খাবারপদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

সারণি ২: জন্মের পর হতে তিন মাস বয়স পযন্ত বাছুরকে খাওয়ানোর নিয়ম

বয়স (সপ্তাহ)

প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য দুধ

প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য দানাদার

কচি ঘাস/ ইউএমএস

১-২

১০

সামান্য পরিমাণ

সামান্য পরিমাণ

৩-৪

০.৫

সামান্য পরিমাণ

৫-৬

১.০

সামান্য পরিমাণ

৭-৮

১.৫

সামান্য পরিমাণ

৯-১০

২.০

সামান্য পরিমাণ

১১-১২

২.৫

সামান্য পরিমাণ

দুধ খাওয়ানো

সাধারণত প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ৮ লিটার পরিমাণ দুধ খাওয়ানো উচিত। অর্থাৎ ৪০ কেজি ওজনের বাছুরের জন্য প্রায় ৩-৩.৫ লিটার দুধ খাওয়ানো উচিত। উপর্যুক্ত নিয়মানুসানে প্রায়তিন মাসের মধ্যে বাছুরকে দুধ ছাড়ানো যায়। এরপরও দুধ খাওয়ালে কোনো অসুবিধা নেই।

তবে এ সময় বেশি দুধ খাওয়ানোতে আর্থিক অপচয় হয়। আমাদের দেশে বাছুরকে মোটামুটি ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে দুধ ছাড়ানো হয়।

বাছুরের দানাদার খাদ্য

এই দানাদার মিশ্রণ কম আঁশ যুক্ত এবং উচ্চ প্রোটিন ও উচ্চ শক্তি সম্পন্ন হতে হয়। দানাদার খাদ্যের দুটি ফর্মুলা নিচে দেয়া হলো।

সরণি ৩: বাছুরের জন্য কাফ স্টার্টার (% হিসাবে)

উপাদান

১ নং

২ নং

গমের ভুসি

২৫

-

গম/ চাল ভাঙ্গা

২০

২০

মাষকালাই/ খেসারি ভাঙ্গা

২৫

২৫

তিলের খৈল

১৫

-

নারিকেলের খৈল

-

১৫

ঢেঁকিছাটা চালের কুঁড়া

-

২৫

শুটকি মাছের গুঁড়া

চিটাগুড়

লবণ

১.৫

ঝিনুক/ হাড়ের গুঁড়া

১.৫

ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স

০.৫

০.৫

 

১০০

১০০

কাচি ঘাস অথবা ইউ এম এস

ছোট বাছুরকে কচি ঘাস, ডালজাতীয় ঘাস ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অভ্যাস করলে ইউরিয়া মোলাসেস খড় বা ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাতকৃত খড় খাওয়ানো যেতে পারে। দৈহিক ওজনের ১.৫% হারে পূর্বে উল্লেখিত দানাদার খাবারের সাথে পযাপ্ত পরিমাণ ঘাস বা খড় খাওয়ালে মোটামুটি ভাল ফল আশা করা যায়।

বাড়ন্ত গরুকে খাওয়ানোর পদ্ধতি

বাছুরের বয়স মোটামুটি ৬ মাস বয়সের পর থেকো বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের ওজনের ১% হারে দানাদার খাবারের সাথে ইউ এম এস বা সাইলেজ বা সবুজ ঘাস বা ইউরিয়া সংরক্ষিত খড় খাওয়ালে ভাল দৈহিক ওজন বৃদ্ধি আশা করা যায়।

সারণি ৪: বাড়ন্ত, বয়ষ্ক গরুর জন্য সম্ভাব্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণ (গ্রাম)

উপাদান

মিশ্রণ-১

মিশ্রণ-২

মিশ্রণ-৩

মিশ্রণ-৪

মিশ্রণ-৫

চালের খুদ

-

২০০

-

২০০

১০০

গম ভাংগা

-

-

১৫০

-

-

খেসারি ভাংগা

-

-

-

-

২৫০

গমের ভুসি

৫৪০

৩০০

২৫০

১৫০

১৫০

চালের কুঁড়া

-

২৫০

৩০০

২০০

২৫০

শুঁটকি মাছের গুঁড়া

৫০

৫০

৫০

৫০

লবণ

ঝিনুকের গুড়া

মোট

১০০০

১০০০

১০০০

১০০০

১০০০

পুষ্টিমান এম ই (মেগাজুল প্রতি কেজি)

১০.৭১

১১.২৬

১০.৮৮

১১.০৪

১১.০৬

প্রোটিন (গ্রাম/ কেজি)

২০৭

১৮৭

১৮৩

১৮১

১৮৪

দাম (টাকা/ কেজি)

৭.৮৫

৭.৫৫

৭.৭৪

৭.৭০

৭.৭৭

বিএলআরআই-এর  এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউ এম এস বা ইউরিয়া সংরক্ষিত খড়ের সাথে ১.৫ কেজি গমের ভুসি এবং ১০০ গ্রাম শুটকি মাছের গুঁড়া ব্যবহার করে গরুর দৈনিক প্রায় ৭০০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে গরুকে খাওয়ানোর জন্য যে বিভিন্ন প্রকার দানাদার মিশ্রণ হতে পারে তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো (এক কেজি মিশ্রণের পরিমাণ)। তাছাড়া গরুকে খাওয়ানোর জন্য যে বিভিন্ন প্রকার আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে তা হলো ইউরিয়া- মোলাসেস খড় (ইউ এম এস), ইউরিয়া সংরক্ষিত খড় এবং কাচা ঘাস (যেমন নেপিয়ার, পারা, ভুট্টা, ওট, সরগম এবং ডাল জাতীয় ঘাস, খেসারি মাষকলাই, ইপিল ইপিল ইত্যাদি)। এই ঘাস খড়ের সাথে মিশিয়ে বা সাধারণ ঘাস ও ডাল জাতীয় ঘাস মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। তাছাড়া কখনই ডাল জাতীয় ঘাসকে এককভাবে খাওয়ানো ঠিক নয়, অন্য ঘাস বা খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।

৫নং সারণিতে বিভিন্ন ঘাসের মিশ্রণ দেয়া হলো।

সারণি ৫: বিভিন্ন ধরনের ঘাসের মিশ্রণ

 

 

উপাদান

শুষ্ক পদার্থের হার শতকরা পরিমাণ

প্রোটিন (%)

বিঃ শক্তি (গঔ/ কম)

মিশ্রণ-১

পারা

৬৫

১২

৮.৭

কাউপি

২৫

মোলাসেস

১০

মিশ্রণ-২

নেপিয়ার

৭০

১০

৮.২

খেসারি

২০

মোলাসেস

১০

মিশ্রণ-৩

ভুট্টা

৮০

১০

৮.৭

খেসারি

২০

মিশ্রণ-৪

দেশী ঘাস

৭০

৮.১

ইপিল

২০

মোলাসেস

১০

 বাছুরের রোগ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা

বাছুরকে স্বাস্থ্যবান, কার্যক্ষম, উৎপাদনমুখি রাখতে শুধু সুষম খাদ্য সরবরাহই যথেষ্ট নয়, রোগব্যাধি হতে মুক্ত রাখাও একান্ত দরকার।

রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে বাছুর দুর্বল, স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়ে, ফলে এদের দৈহিক বৃদ্ধি, কার্যক্ষমতা ও উৎপাদন হ্রাস পায় এবং মাঝে মাঝে অকাল মৃত্যুতে মালিকের তথা দেশেরে গো-সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকে।

বাছুরের রোগ

বাছুরের রোগ সাধারণত দুই প্রকার। সাধারণ রোগ: যে সব রোগব্যাধি আক্রান্ত প্রাণীতে সীমাবদ্ধ থাকে, সহজে অন্য প্রাণীতে সংক্রামিত হয় না এবং তুলনামূলকভাবে প্রাণীর মৃত্যুর হার কম, তাকে সাধারণ রোগ বলে। যদিও সাধারণ রোগে মৃত্যুর হার কম, কিন্তু আক্রান্ত বাছুরের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, দৈহিক শক্তি ও বৃদ্ধি কমে যায় এবং উৎপাদন হ্রাস পায়। এজন্য সাধারণ রোগকে অবহেলা না করে ত্বরিত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমাদের দেশে বাছুরের সচরাচর  যে সব সাধারণ রোগ-বালাই দেখা যায় বা হয়, সেগুলোর প্রাথমিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হচ্ছে:

 কাটা, পোড়া, ঘা, আঘাত ইত্যাদি

এগুলো জীবাণুঘটিত রোগ না হলেও অবহেলা করা উচিত নয়। এ রোগগুলোর কারণে বাছুরের প্রাথমিক কোনো ক্ষতি না হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য রোগ বা রোগজীবাণুতে সহজে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া এ রোগগুলোর ফলে বাছুরের স্বাস্থ্য এবং কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাই এসব সামান্য রোগকে অবহেলা না করে সময়মত প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

পেট ফাঁপা, বদ হজম ইত্যাদি

খাদ্যনালীতে কিছু আটকে গেলে অথবা কাদা বালি মিশ্রিত খাদ্য খেলে পেট ফাঁপা বা বদ হজম দেখা দিতে পারে। গ্যাসের জন্য পেট অত্যধিক ফুলে যায় ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। প্রাণী জাবর কাটাও বন্ধ করে দেয় এবং শরীরের তাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায় (১০২০-১০৪০ ফা.)।      অসুখ দেখা দেয়ার সাথে সাথে খাদ্য বন্ধ রাখা দরকার এবং এ অবস্থায় প্রাণীকে ঢালু জায়গায় রাখতে হবে যেন তার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট না হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে পারগেটিভ বা কারমিনেটিভ মিকচার খাওয়ানের ব্যবস্থা নিলে ভাল হয়। প্রয়োজনবোধে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সহায়তায় পেট ফুটো করে গ্যাস বের করে দেয়া যেতে পারে।

উদরাময়, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি

অনেক রোগের কারণে পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে, তবে অন্ত্রের রোগ এদের মধ্যে অন্যতম। ঘনঘন পাতলা পায়খানার কারনে বাছুরের মুখ শুকিয়ে যায় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। জীবাণুঘাটিত পাতলা পায়খানার কারণে আক্রান্ত বাছুর মারাও যেতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বাছুরকে সালফার জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। দুর্বলতার জন্য স্যালাইন বা গ্লুকোজ ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে।

কোষ্ঠ্যকাঠিন্য

বিভিন্ন কারণে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হলে খাদ্যে অরুচি, পেট ফোলাভাব, পেট ফোলাভাব, পেটব্যথা, পায়খানা শক্ত ও পরিমাণে খুব কম ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যে ক্যাস্টর ওয়েল (ভেরেন্তার তৈল) বাওয়েল লিলি (তিষির তৈল) ১/২-২ পাউন্ড খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়া লবণ, পানিসহ ম্যাগসালফ (Magsulf), পানিসহ ম্যাগকারব (Magcurb) বা অন্যান্য পারগেটিভ মিকচার (Purgative) খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়।

সর্দি-কাশি

অত্যধিক ঠান্ডা, বৃষ্টিতে ভেজা, প্রখর রৌদ্রে থাকা, আবহাওয়ার পরিবর্তনহেতু সর্দি-কাশি হতে পারে। তাছাড়া রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হলেও সর্দিড়কাশি হতে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়া, মাঝেমাঝে হাচিঁ বা কাশি দেয়া প্রাথমিক লক্ষণ, তবে এর সাথে শরীর ব্যথা ও জ্বর হতে পারে। সর্দি-কাশি দেখা দিলে আক্রান্ত বাছুরটিকে শুকনো আলো-বাতাস