ভূমিকা:
দেশের প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে ব্রয়লার পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও বেকার সমস্যার সমাধান ও আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, সর্বোপরি দেশের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্রয়লার পালনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আত্ম-কর্মসংস্থান ও পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রয়লার পালনের ওপর একটি লাগসই মডেল উদ্ভাবন করেছে। এ মডেলের আওতায় একজন ক্ষুদ্র অথবা মাঝারি আকারের খামারি প্রথমত ৫০০ টি ব্রয়লার পালন করে সাংসারিক খরচ চালানোর পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টি মিটিয়ে ধীরে ধীরে ব্রয়লার পালনকে আত্ম-কর্মসংস্থানের মূল চাবিকাঠি হিসেবে গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, একজন খামারি প্রতি বছর কমপক্ষে ৬ ব্যাচ ব্রয়লার পালন করতে পারেন, যা দ্বারা ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি গ্রামীণ পরিবারের ভরণপোষণের ব্যয় মেটানো সম্ভব। ব্রয়লার পালন দারিদ্র্য বিমোচনে সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি পারিবারিক পুষ্টির অভাব পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ১ কেজি ব্রয়লার উৎপাদন করতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে এবং এর জন্য মাত্র ১.৬৫ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এত অল্পসময়ে অন্য কোনো খাত থেকে উন্নতমানের আমিষ জাতীয় খাদ্যের যোগান দেয়া ও স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব নয়।
ব্রয়লার মডেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
ব্রয়লার পালন মডেলটি বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত অংগগুলো (Component) সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১. খামারি বা সুফলভোগী নির্বাচন,
২. খামারিদের সংগঠন তৈরি,
৩. খামারিদের পারিবারিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে,
৪. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক ঘর তৈরি/স্থান নির্বাচন,
৫. ব্রয়লার বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা,
৬. ব্রয়লারের জন্য জাত/স্ট্রেইন নির্বাচন,
৭. সুষম খাদ্য তৈরি করণ,
৮. ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা,
৯. খামারি সংগঠনের মাধ্যমে উপকরণ ক্রয় এবং উৎপাদিত ব্রয়লার বাজারজাতকরণ,
১০. খামারিদের মধ্যে মতবিনিময় সভা,
১১. সংগঠনের মাধ্যমে আপদকালীন আর্থিক সংস্থান।
খামারি/সুফলভোগী নির্বাচন:
বাংলাদেশের যে কোনো এলাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ১০-১২ জন উৎসাহী/আগ্রহী, স্বল্প শিক্ষিত, পরিশ্রমী ও সৎ মহিলা বা বেকার যুবককে খামারি হিসেবে নির্বাচনপূর্বক সংগঠিত করতে হবে। তবে নির্বাচিত খামারিদের যাতে ব্রয়লার খামার করার জন্য নিজস্ব জমি থাকে এবং সেই স্থানটি ব্রয়লার পালনের জন্য অবশ্যই যথোপযোগী হতে হবে। নির্ধারিত খামারিদের সংগঠনের আওতায় আসলে খামারিরা দলগতভাবে খাদ্য, টিকা ও খাদ্য মিশ্রিতকরণ প্রভৃতি কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া, খামারিরা তাদের খামার বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে একে অপরের সাথে মত বিনিময় করতে পারে এবং নিজেদের সমস্যা নিজেরাই প্রাথমিকভাবে সমাধান করতে পারবে।
নির্বাচিত খামারির পারিবারিক প্রশিক্ষণ:
নির্বাচিত খামারিদের ব্রয়লার পালনের ওপর তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক যেমন- ব্রয়লার বাচ্চা নির্বাচন, বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা সুষম খাদ্য তৈরি, টিকাদান কর্মসূচি, খাদ্য সংরক্ষণ, ব্রয়লারের বিভিন্ন রোগ ও প্রতিকার, বায়োসিকিউরিটি, আলোক ব্যবস্থাপনা, জীবাণুনাশকের ব্যবহারের গুরুত্ব, রেকর্ড সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং খামারের আয়-ব্যয়ের হিসাবের পাশাপাশি সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, যাতে একজন নতুন খামারি “হাতে কলমে শিখে”বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারে। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে পরিবারের দুইজন সদস্যকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে, যাতে একজন পারিবারিক সদস্যের অনুপস্থিতিতে অন্যজন খামারের কাজ চালিয়ে যেতে পারে। খামারের সকল কার্যক্রমে পারিবারিক সহযোগিতা নিশ্চিত হবে।
ফলোআপ প্রশিক্ষণ:
দুই এক ব্যাচ ব্রয়লার পালনের পরে পুনরায় সমস্যাভিত্তিক খামারিদের একত্রিত করে ফলোআপ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
৪। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক ঘর তৈরি/স্থান নির্বাচন
(ক) খামারের জায়গা নির্বাচন:
ব্রয়লার খামার বিজ্ঞাপনের জন্য নিম্নলিখিত শর্তসমূহ পালন করা অতীব প্রয়োজন:
১. খামার তৈরির জন্য নির্বাচিত স্থান আবাসিক আবাসন থেকে একটু দূরে হওয়া প্রয়োজন,
২. অন্য মুরগির খামার বা প্রাণীর ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে হতে হবে,
৩. পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে,
৪. খামারের আশপাশে পচা ডোবা ও নর্দমামুক্ত হতে হবে,
৫. বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে,
৬. বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে,
৭. ব্রয়লার সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকতে হবে,
৮. খামার পরিচালনায় মালিকের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।
(খ) ৫০০ ব্রয়লারের আদর্শ ঘর নির্মাণ:
ব্রয়লারের জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় ঘর নির্মাণ করতে হয়। ঘরের চারপাশে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ৫০০ ব্রয়লারের জন্য (৪২+৫)Í ১২ = ৫৬৪ বর্গফুট জায়গা যথেষ্ট। এই জায়গার মধ্যে ৪২Í১২ = ৫০৪ বর্গফুট জায়গা ব্রয়লারের জন্য এবং ৫Í১২ = ৬০ বর্গফুট সার্ভিস কক্ষ। মাঁচা পদ্ধতিতে ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের মাটি থেকে ৩ ফুট উঁচুতে মাঁচা থাকবে। মাটি থেকে মাঁচা পর্যন্ত ফাঁকা জায়গা গুনার তার জালি অথবা বাশেঁর জালি দিয়ে আটকিয়ে রাখতে হবে যাতে কুকুর, বিড়াল এবং অন্য কোন বন্য প্রাণী মাঁচার নিচে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরের সার্ভিস কক্ষ ছাড়া বাকি তিন দিকে বাশেঁর বা তার জালির বেড়া থাকবে যাতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল করতে পারে। ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা হবে এবং ঘরের পশ্চিম প্রান্তে সার্ভিস কক্ষ থাকবে, যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এক দিকে ঢুকে অন্য দিকে বের হতে পারে।
ঘরের বর্ণনা ঘরের চালা:
ঘরের চালা দোচালা হবে। ঘরের চালা ছন, গোলপাতা বাশেঁর চাটাই দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। তবে ছন ও গোলপাতার পরিবর্তে করুগেটেট টিন ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে টিনের নিচে অবশ্যই তাপ নিরোধক বা বাশেঁর চাটাই দিতে হবে অথবা অন্য কোনো ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পাশের বেড়া:
পাশে বাঁশের বাতা দ্বারা তৈরি ফাক বেড়া বা তার জালির বেড়া দেয়া যেতে পারে। তবে বেড়ার ফাঁকগুলো কোনো মতেই ১Í১ বর্গ ইঞ্চির বেশি হওয়া চলবে না।
সার্ভিস কক্ষ:
সার্ভিস কক্ষে (৫Í১২ = ৬০ ব. ফুট) ব্রয়লারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জীবাণুনাশকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম থাকবে।
ব্রয়লার পালনে কাঙ্ক্ষিত ব্যবস্থাপনাঃ
১. ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্তকরণ
২. ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা
৩. ব্রয়লার বাচ্চার প্রথম খাদ্য
৪. খাদ্য ব্যবস্থাপনা
* প্রয়োজনীয় পুষ্টি
* সুষম খাদ্য
মুরগির ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করণ:
মুরগির ঘর তৈরির সকল কার্য শেষ হলে, ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্তকরণ করা প্রয়োজন। প্রথমত ঝাড়ু দিয়ে মাঁচা ও মাঁচার নিচে, পাশের বেড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর পরিষ্কার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং সবশেষে জীবাণুনাশক (পভিসেপ, সুপারসেপ্ট, ক্লোরোক্স, আয়োসান, খায়োসান, ভিরকন এস) এর যে কোনো দ্রবণ দ্বারা ঘরের মাঁচা , পাশের বেড়া ও খামারের আশপাশ জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরে মুরগির বাচ্চা উঠানোর ৩ (তিন) দিন পূর্বে পুনরায় জীবাণুমুক্তকরণ করতে হবে।
বাচ্চা ক্রয় ও ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা:
বাচ্চা ঘরে উঠানোর কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পূর্বে ব্রুডিং-এর জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। খামারিদের জন্য ১০০০ বাচ্চা এক সাথে গ্রুপ করে ব্রুডিং করাই শ্রেয়; তাতে যেমন, অর্থের সাশ্রয় হয়, তেমনই পরিশ্রমও কম লাগে। এক দিনের ব্রয়লার বাচ্চা ভালো হ্যাচারি থেকে ক্রয় করতে হবে। ব্রয়লার হাইব্রিডগুলোর মধ্যে রয়েছে আরবর একর, হাবার্ড কাসিক, ভ্যানকব, হাইব্রো-পিএন ইত্যাদি। নির্বাচিত খামারিদের মধ্যে থেকে অধিক উদ্যোমী ভালো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত খামারি দ্বারা ব্রুডিং করানো ভালো। শীতকালে সাধারণত ৩-৪ সপ্তাহ এবং গরমকালে ২-৩ সপ্তাহ ব্রুডিং করানো হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৯৫০ ফা. এ রাখা হয়, তারপর প্রতি সপ্তাহে ৫০ ফা. করে কমাতে হবে। ইলেকট্রিক বাল্ব, গ্যাসের চুলা, কেরোসিনের চুলা ও বিএলআরআই উদ্ভাবিত চিক ব্রডার দিয়েও ব্রুডিং করা যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য ক্রয়, সুষম রেশন ফর্মুলেশন, খাদ্য উপাদানসমূহ সঠিকভাবে মিশ্রিত করণ এবং খাদ্য সংরক্ষণ খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান অংশ।
(ক) ব্রয়লার বাচ্চার প্রথম খাদ্য:
ব্রয়লার বাচ্চা খামারে পৌছানোর পর পরই প্রথম, গ্লুকোজ ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন এবং ভিটামিন ‘সি’ মিশ্রিত পানি (প্রতি লিটারে ২৫ গ্রাম গ্লুকোজ, ১ গ্রাম ভিটামিন ডি, এবং ১ গ্রাম ভিটামিন ‘সি’) চিকগার্ডের পানির পাত্রে সরবরাহ করতে হবে। অতপর চিকগার্ডের ভেতরে বাচ্চা ছাড়তে হবে। প্রয়োজনে বাচ্চা ছাড়ার পূর্বে বাচ্চার ঠোট গ্লুকোজ ও ভিটামিন মিশ্রিত পানিতে ডুবিয়ে পানি পান করাতে হবে। এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, বাচ্চা ছাড়ার কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা ভিটামিন মিশ্রিত পানি পান করার পর বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র সচল হলে প্রথম দিন গম বা ভুট্টার দানা বা বাচ্চার জন্য তৈরিকৃত খাদ্য যোগান দেয়া বা সরবরাহ করা যেতে পারে। তারপর ব্রয়লার স্টারটার সরবরাহ করা হয়। ব্রয়লার স্টারটারে শতকরা ২১-২২ ভাগ প্রোটিন ২৮০০-২৯০০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি (ক্যালরি/কেজি) থাকে। প্রথম সপ্তাহে প্রতিটি বাচ্চার জন্য গড়ে ৮-১০ গ্রাম খাবার দরকার হয়।
(খ) ব্রয়লার খাদ্য:
ব্রয়লার খাদ্য তৈরি করার পূর্বে যে সমস্ত বিষয় বিবেচনা করা দরকার তা নিম্নে দেয়া হলো।
১. খাদ্যসামগ্রী ও উপকরণের সহজ প্রাপ্যতা,
২. খাদ্য উপকরণের পুষ্টি মান,
৩. খাদ্য উপকরণের মূল্য,
৪. খাদ্যের পরিপাচ্যতা ও সুস্বাদুতা,
৫. পোল্ট্রি প্রজাতি, বয়স এবং উৎপাদন,
৬. খাদ্যের ফাংগাস এবং জীবাণুমুক্ততা,
৭. বিভিন্ন খাদ্য উপাদান ব্যবহার করার পরিমাণ বা মাত্রা,
৮. সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বিবেচনা করতে হবে।
খামারিদের সুবিধার জন্য নিম্নে দুইটি সুষম খাদ্যের নমুনা প্রদান করা হলে:
উপাদান |
১ নং নমুনা খাদ্য |
২ নং নমুনা খাদ্য |
||
পরিমাণ (কেজি) |
||||
স্টার্টার (০-৪ সপ্তাহ) |
ফিনিসার (৫-৬ সপ্তাহ) |
স্টার্টার (০-৪ সপ্তাহ) |
ফিনিসার (৫-৬ সপ্তাহ) |
|
গম |
২৫.০০ |
২৫.০০ |
১৩ |
১২ |
ভুট্টা |
২৮.০০ |
৩৩.০০ |
৪২ |
৪৭ |
চালের কুড়া |
১৩.৫০ |
২২.৫০ |
১৩ |
১৫ |
সয়াবিন মিল |
১০.০০ |
৪.০০ |
২২ |
১৮ |
তিলের খৈল |
১৩.০০ |
৬.০০ |
- |
- |
প্রোটিন কনসেনট্রেট |
৫.০০ |
৫.০০ |
৮ |
৬ |
মিট এন্ড বোন মিল |
৫.০০ |
৪.০০ |
- |
- |
ঔষধ |
০.২৫০ |
০.২৫০ |
- |
- |
ভিটামিন প্রিমিক্স |
০.২৫০ |
০.২৫০ |
০.২৫০ |
০.২৫০ |
পুষ্টি |
||||
বিপাকীয় শক্তি |
|
|
|
|
(কিলোক্যালরি /কেজি) |
২৯০০ |
৩০০০ |
২৯১৮ |
২৯৯৬ |
প্রোটিন (%) |
২৩ |
২০ |
২১.১৩ |
১৯.১০ |
ক্যালসিয়াম (%) |
১.১১ |
০.৮৭ |
১.২৩ |
০.৯৭ |
প্রাপ্ত ফসফরাস (%) |
০.৬৪ |
০.৪৭ |
০.৮৩ |
০.৬৬ |
লাইসিন (%) |
১.০০ |
০.৮৫ |
১.০০ |
০.৮৫ |
(গ) আলোক ব্যবস্থাপনা:
ব্রয়লার বাচ্চার অধিক হারে খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য সার্বক্ষণিক আলো প্রদান করা প্রয়োজন। আলোক ব্যবস্থা ব্রয়লার বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সুনির্দিষ্ট আলোক ব্যবস্থাপনার সাহায্যে ব্রয়লারের খাদ্য রূপান্তরের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রথম সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা এবং ২য় সপ্তাহ থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত ২৩ ঘণ্টা আলো এবং ১ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখা প্রয়োজন। প্রথম সপ্তাহে ব্রুডার থেকে ৪-৫ ফুট উচুতে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ৭-৮ ফুট উঁচুতে ১০০ ওয়াটের ৪টি বাল্ব ঝুলিয়ে আলো দেয়া যেতে পারে। প্রথম থেকেই প্রতি রাতে আধ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা আলো বন্ধ রেখে বাচ্চাদের অন্ধকারের সাথে পরিচয় করানো উচিত।
(ঘ) টিকা দান কর্মসূচি:
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত যে টিকাদান কর্মসূচিটি মাঠ গবেষণার মাধ্যমে সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে তা নিম্নে দেয়া হলো। তবে যে সমস্ত এলাকায় ব্রয়লার খামারের সংখ্যা খুবই নিবিড় সে সমস্ত এলাকায় গামবোরো ভ্যাকসিনের স্ট্রেইনের পরিবর্তন হতে পারে।
বয়স (দিন) |
ভ্যাকসিনের নাম |
ভ্যাকসিনের ধরন |
প্রয়োগের পথ |
ডোজ |
রোগের নাম |
৭ |
এনডি- ক্লোন ৩০ |
জীবন্ত |
চোখে |
১ ফোটা |
রানীক্ষেত |
১৪ |
গামবোরো ডি-৭৮ |
জীবন্ত |
চোখে |
১ ফোটা |
গামবোরো |
২১ |
এনডি-৩০ |
জীবন্ত |
চোখে |
১ ফোটা |
রানীক্ষেত |
২৮ |
গামবোরো ডি-৭৮ |
জীবন্ত |
চোখে |
১ ফোটা |
গামবোরো |
(ঙ) ব্রয়লার খামারে বায়োসিকিউরিটি:
খামারকে রোগমুক্ত রাখতে এবং কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পেতে হলে বায়োসিকিউরিটির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
১. রোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার উত্তম। সুতরাং সেদিকে নজর দিতে হবে।
২. খামারের প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক পাত্র বা স্প্রেয়ার রাখতে হবে।
৩. খামারে ব্যবহারের জন্য আলাদাভাবে পোষাক ও জুতার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. মৃত ব্রয়লার গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়ে ফেলতে হবে।
৫. অন্যান্য মোরগ-মুরগির ঘরে যাতে পাখি, ইঁদুর, কুকুর বা বন্য বিড়াল প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. দর্শনার্থীদের খামার পরিদর্শনে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৭. সপ্তাহে ১ দিন খামারের মাঁচা , বেড়া, আশপাশ জীবাণুনাশক দ্বারা স্প্রে করতে হবে।
প্রতি ব্যাচ সম্পূর্ণ করার কম পক্ষে ১৫ দিন পর বাচ্চা উঠানো যাবে। বাচ্চা উঠানোর পূর্বে খামারের মাঁচা, বেড়া আশপাশ ভালভাবে জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।